Thursday, January 27, 2022

পুরানো কলকাতার গল্প: সাঁ সুশি

শুরুতেই বলে রাখি এই লেখার সঙ্গে কিন্তু জাপানি খাবার "সুশির" কোনও সম্পর্ক নেই! তাহলে নিশ্চয়ই ভাবছেন এই "সাঁ সুশি" আবার কি জিনিষ? আসুন তবে সাঁ সুশির গল্পটা শোনাই যাক।

সময়টা তখন ১৯ শতকের প্রথম দিক। সাধের শহর কলকাতাকে তিল তিল করে গড়ে তুলছে ইংরেজরা। বাণিজ্যের সঙ্গে আমোদ প্রমোদের দিকেও নজর দিয়েছে তারা। খাস বিলেতের মতোই কলকাতাতেও নাট্যচর্চার রমরমা। কলকাতার প্রথম থিয়েটার "প্লেহাউস" ১৭৫৩ তে শুরু হয়ে ১৭৫৬তেই বন্ধ হয়ে গেছে। উত্তরসূরী "নিউ প্লেহাউস" বা "ক্যালকাটা থিয়েটার" ১৭৭৫ থেকে ১৮০৮ সাল অব্দি চলে বন্ধ হয়ে গেল। এরপর সাহেব মেমদের নাট্যচর্চার জায়গা হয়ে উঠলো ১৮১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত "চৌরঙ্গী থিয়েটার"। কিন্তু ১৮৩৮এর মে মাসে এক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়ে গেল চৌরঙ্গী থিয়েটার! মাথায় হাত পড়ল সাহেবদের। নাট্যচর্চার অন্যতম জায়গাও যে নষ্ট হয়ে গেলো! বিপদকালে এগিয়ে এলেন সে সময়ের বিখ্যাত অভিনেত্রী ম্যাডাম এস্থার লিচ। মেমসাহেব ছিলেন সেই সময়ের চৌরঙ্গী থিয়েটারের যাকে বলে স্টার অ্যাট্রাকশন! যাই হোক... মূলত তাঁর উদ্যোগেই গোড়াপত্তন হলো নতুন থিয়েটার সাঁ সুশির। 

কলকাতার ওয়াটারলু স্ট্রীটে অবস্থিত সেন্ট অ্যান্ড্রুজ লাইব্রেরীর নীচের তলায় শুরু হলো সাঁ সুশি। প্রায় ৪০০ আসন বিশিষ্ট এই নতুন থিয়েটার অস্থায়ী ভাবেই তার যাত্রা শুরু করল ২১শে আগস্ট ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে। একই সঙ্গে নতুন থিয়েটার হল তৈরীর কাজও জোরকদমে এগিয়ে যেতে থাকলো। অর্থসাহায্য করতে এগিয়ে এলেন অনেকেই। এঁদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য নাম লর্ড অকল্যান্ড (তখনকার গভার্ণর জেনারেল) এবং প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর! অবশেষে ৮ই মার্চ ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে নিজের নতুন ঠিকানায়, অর্থাৎ সেইসময়ের ১০ নম্বর পার্ক স্ট্রীটে, আরও একবার যাত্রা শুরু করলো সাঁ সুশি! সুবিশাল এই অট্টালিকার নকশা তৈরী করেছিলেন জে ডাব্লিউ কলিন্স। শুরুর দিকে বেশ রমরমা ছিল এই নাট্য মঞ্চের। ম্যাডাম এস্থার লিচ নিজেই ছিলেন এখানকার ডাইরেক্টর এবং ম্যানেজার। কিন্তু ১৮৪৩ সালের ২রা নভেম্বর আচমকাই ঘটে গেলো দুর্ঘটনা! একটি দৃশ্যে অভিনয় করার সময় অন্যতম অভিনেত্রী এস্থার লিচের পরনের কাপড়ে আগুন ধরে যায়। গুরুতর আহত হন তিনি। এর কয়েকদিন পরেই, ২২শে নভেম্বর ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে, মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই মারা যান তিনি। 

এস্থার লিচের পর সাঁ সুশির দায়িত্বে আসেন তাঁরই সহকর্মী নিনা ব্যক্সটার। এরপর ১৮৪৪ সালে আবার দায়িত্ব বদল হয় এবং এবার দায়িত্ব তুলে নেন জেমস ব্যারি। মালিকানা বদল হলেও সুদিন আর ফেরে না সাঁ সুশির। অবশেষে ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে বন্ধই হয়ে যায় সাঁ সুশি। মনে করা হয় বাংলা থিয়েটারের প্রসারে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা ছিল চৌরঙ্গী থিয়েটার এবং সাঁ সুশির। 

একটি মজার তথ্য দিয়ে এই লেখা শেষ করবো। এক সময় যেখানে ছিল পুরানো কলকাতার অন্যতম থিয়েটার সাঁ সুশি, আজ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে অন্য একটি বিখ্যাত বিল্ডিং। কোন বিল্ডিং? সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ!

sans souci, kolkata, history of kolkata, old kolkata,


2 comments:

  1. একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন, আমাদের শহরের আঁকেবাঁকে যে কতো ইতিহাস ছড়িয়ে রয়েছে, কে-ই বা জানি!

    ReplyDelete
  2. তথ্যভিত্তিক এই প্রতিবেদন থেকে অনেক কিছুই অবগত হলাম। আমার প্রিয় কলেজের সঙ্গে যে এই ইতিহাস লুকিয়ে আছে জেনে সমৃদ্ধ হলাম।

    ReplyDelete