Monday, January 23, 2023

কোরিয়ান ফুড ট্যুরের ইতিউতি

খাদ্য সফরের কোরিয়ান পর্ব/কোরিয়ান ফুড ট্যুর। 

মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই, থাকার কথাও নয়। নিত্যনতুন পরিভাষা যে কোনো বিষয়েরই হোক না কেন, একটা আগ্রহ জাগলেই সেটা নিবৃত্ত করার জন্য সচেষ্ট হয় তারা। আমাদের কয়েকজনের আগ্রহ খাবারদাবার নিয়ে, হ্যাঁ, চর্ব্যচোষ্য লেহ্যপেয়র মধ্যে যা অজানা, অচেনা, স্বাদ পাওয়া হয়নি, সেটা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষাতে পিছপা হইনা। 

ইদানীং দক্ষিণ কোরিয়ার বেশকিছু বিষয় আমাদের চারদিকে জনপ্রিয় হয়েছে। তার মধ্যে যেমন সিনেমা, ওয়েব সিরিজ বা কোরিয়ান পপসঙ্গীত আছে, তেমনই আছে কোরিয়ান খাদ্যসম্ভার। তা, কলকাতায় খুব সম্প্রতি কিছু খাদ্য স্থান খুলেছে এই দেশের খাবার নিয়ে, তারই মধ্যে একটি হলো King's Bakery.. এখনো পর্যন্ত চারটি শাখা আছে যার মধ্যে তিনটি (পূর্ণদাস রোড, বালিগঞ্জ এবং যোধপুর পার্ক) দক্ষিণ কলকাতায়, আরেকটি রাজারহাটে। কয়েকদিন আগেই আমার সাথে কয়েকজন খাদ্যরসিক বন্ধুবান্ধবদের আলোচনা হচ্ছিলো একবার সেখানের একটি শাখায় যাওয়াটা কর্তব্য। তা যে ভাবনা আসে, সেটা ফলপ্রসূ করতে গেলে যা যা করণীয়, তা করা হলো। প্রিয়াঙ্কা পূর্ণদাস রোডে খোঁজ নিয়ে আমাকে জানানোর পরে আমরা স্থির করলাম আজকের দিন, অর্থাৎ ২২শে জানুয়ারী একবার গিয়ে একটু চেখে আসা যাক এই দেশের কুইসিন। 

কোরিয়ার খাবারের মূল উপাদান চাল। হুম, এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের মতই সেখানে চালের বিভিন্ন প্রকারভেদের রূপদান পায় খাদ্যের মধ্যে। সাথে থাকে মাছ, মাংস, এবং বিভিন্নরকম সবজির সম্ভার। রান্নায় কিছু পরিমাণ সয়াসস আর কালো বীনের সস ব্যবহৃত হয় খোলতাই স্বাদের জন্য। ভাতের ধরণ খানিকটা আঠালো, নরম চালের। কোরিয়ার মিষ্টি কিম্বা ডেসার্ট পদেরও বেশ সুনাম আছে দেখলাম। সে কথায় আসছি পরে। 

কথা অনুযায়ী আমরা কজন, অর্থাৎ কৌশিকী দি, প্রিয়াঙ্কা, চিরঞ্জয়, চিরঞ্জয়ের স্ত্রী রিম্পা, ছোট্ট রিয়ান, বন্ধু সুরিত, সুদীপ্ত দা এবং আজকের চমক, অলস ঘরকুনো চমৎকার রন্ধনশিল্পী বিপ্লব দা এবং এই শর্মা!! বিপ্লব দা আজকের সফরে সঙ্গী হতে চেয়েছে এ এক দারুণ আশ্চর্যের ব্যাপার। নিজে ভালো রাঁধে বলেই নয়, এই ভদ্রলোক অফিস ছাড়া কোথাও যেতে একেবারেই চায়না। সে ভালো কথা, মোটামুটি সাড়ে পাঁচটা নাগাদ আমরা পৌঁছালাম ওখানে। সুন্দর সাজসজ্জা, আসবাবপত্র এবং কর্মচারীদের ব্যবহার, ভালো লাগলো। শীত তো কলকাতার মায়া প্রায় ত্যাগ করেইছে, তা আর কি করা যাবে? মেন্যু দেখেশুনে ঠিক করা গেলো অর্ডার দেওয়া হবে নানারকম পদ, যাতে বৈচিত্র্য আর স্বাদের ধরণ পরখ করা যায় ঠিকঠাক। 
তাই, 

১) 𝙏𝙪𝙣𝙖 𝙂𝙞𝙢𝙗𝙖𝙥 (চালের সঙ্গে টুনা, গাজর, শশা, বাঁধাকপি ইত্যাদি সবজির মিশ্রণের চাকতি, মোড়কটা সামুদ্রিক শৈবালের চাদরের, যাকে বলে gim).. কালো বীনের সস সহযোগে খেতে মন্দ নয়। 

২) 𝙆𝙞𝙢𝙘𝙝𝙞 𝙂𝙞𝙢𝙗𝙖𝙥 (একইরকম, শুধু টুনার বদলে কাঁকড়ার মাংস থাকে)।

৩) 𝙆𝙞𝙢𝙘𝙝𝙞 𝙁𝙧𝙞𝙚𝙙 𝙍𝙞𝙘𝙚 (কিমচি ব্যাপারটা হলো কোরিয়ার প্রথাগত একটি পদ, যাতে নাপা বাঁধাকপি, কোরিয়ান মুলো, গাজর ইত্যাদি কে গাঁজন করে ব্যবহার করা হয় রান্নায়)। বেশ ভালো লেগেছে। 

৪) 𝙏𝙩𝙚𝙤𝙠–𝙗𝙤𝙠𝙠𝙞 (চালের তৈরি এক ধরনের পিঠে যা সিদ্ধ মাছ, ডিমের সাদা অংশ এবং কিছু সবজির অংশ, যেমন পেয়াঁজকলি দিয়ে বানানো হয়, গাঢ় ঝোলের মধ্যে ), এটির স্বাদ মিষ্টি খানিকটা। 

৫) 𝙅𝙖𝙮𝙪𝙠 𝘿𝙚𝙤𝙥𝙗𝙖𝙥 (যারা পর্কপ্রেমিক, তাদের জন্যে চমৎকার একটা পদ, খুব সহজ, শুয়োরের মাংসের কারি, আর ভাত), ঝালমিষ্টির সাযুজ্য রয়েছে, সুস্বাদু। 

৬) 𝙍𝙖𝙢𝙮𝙚𝙤𝙣 (এগ চিকেন স্পাইসি বলা হয়েছিল যাতে একটু ঝালঝাল কিছু একটা হয়.. নাহ্, সে হয়নি, নুডলস হিসেবে সাধারণ স্বাদের)।

এসবের পরে এলো ডেসার্টের পালা। এখানে এটির সম্ভার বেশ ভালো, আমরা নিয়েছিলাম 𝘾𝙖𝙧𝙧𝙤𝙩 𝘾𝙝𝙚𝙚𝙨𝙚 𝘾𝙖𝙠𝙚, 𝙀𝙜𝙜 𝙏𝙖𝙧𝙩 এবং 𝘾𝙧𝙚𝙖𝙢 𝘾𝙝𝙤𝙪𝙭 (ক্রীম ভরা ছোট ছোট বান).. আর আমি তো কোনো জায়গায় চা পেলে চাখতে ছাড়িনা, তাই 𝙎𝙪𝙟𝙚𝙤𝙣𝙜𝙜𝙬𝙖(𝘾𝙞𝙣𝙣𝙖𝙢𝙤𝙣 𝙋𝙪𝙣𝙘𝙝)চেখে দেখলাম বিপ্লব দার সাথে। সে এক দারুণ অদ্ভুৎ বটে, তা দারুচিনি আর কেমনই বা হবে?? 

সব মিলিয়ে আড্ডা, গল্প, নতুন ধরনের খাবার.. একটা ভালো সন্ধ্যা কাটলো। হ্যাঁ, পেটের জন্য বন্ধুমনোভাবপন্ন খাবার, আমার বেশ ভালোই লেগেছে। আবারও কখনো আসা হবে বৈকি, কারণ আজ অনেকেই বিভিন্ন কারণে আসতে পারলোনা। ততক্ষণ, ভালো খাবারের কথা ভেবে মন ভালো করা যাবে। পরিশেষে, যার কথা না বললেই নয়, সে হলো রিয়ান। পুরোটা সময় একবারও অধৈর্য্য বোধ করেনি, বেচারা বড়দের খাবারদাবার খেতেও পারেনি, মিষ্টি জাতীয় ওয়্যাফল আর টার্ট খেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে, কিন্তু রীতিমতো এনার্জি নিয়ে সঙ্গ দিয়েছে সব্বাইকে। বড়ো হলে অবশ্য ওকে নিয়ে খেতেটেতে বেরোবো, হি ইজ আ সুইটহার্ট।😃❤️