Wednesday, April 26, 2023

বেনারস : শুরুর শুরু (দ্বিতীয় পর্ব)


বহুলব্যবহৃত রবীন্দ্রনাথের "দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশিরবিন্দু"... এটির আশ্রয় নিতেই হল। 

রবীন্দ্রনাথ তো একমাত্রিক কথা বলতেন না, এক্ষেত্রেও ধানের ক্ষেত শুধু নয়, দিশি/ঘরোয়া/নিতান্তই আটপৌরে আপনার কিছুকেই উপেক্ষা করে হাটে-বাজারে দৌড়ে সুখ-শান্তি খুঁজে বেড়ানোর কথাও বলেছেন মনে হয়। কিন্তু আমি তো একটু অলস, ঘোরাঘুরি করার নামে বেজায় জ্বর আসে! বেনারস অবশ্য ব্যতিক্রম, কারণ আগেই বলেছি। 

সময়ের সাথে সাথে যাত্রার বাহনের ধরণের পরিবর্তন, অভিযোজন তো হয়েছেই; সড়ক–জল–রেল–আকাশ কিছুই আর আয়ত্তের বাইরে নয়। কিন্তু আমি জানেন, রেলের যাত্রা কেই বেশি পছন্দ করি। রাত্তিরে যখন চারপাশটা নিঝুম হয়ে আসে, তখন ছোট্ট কোনো স্টেশন সাঁইসাঁই করে পেরিয়ে যাওয়া রেল... অন্ধকার জানালার ভেতর থেকে টিমটিমে আলো জ্বলা স্টেশন চত্বরটা, ফাঁকা বেঞ্চ, নীল–লাল অথবা হলদে–কালোয় লেখা অক্ষরগুলো চেষ্টা করে পড়ে ফেলা... অদ্ভুত আনন্দ হয়। আবার সে যদি হয় বড়ো কোনো স্টেশন, অথবা জংশন.. যাত্রীদের হাঁকডাক, নামা অথবা ওঠার জন্য তাড়া, ফেরিওয়ালার ডাক "চায়ে গ্রম.... এই-ই চায়েএএ", আবার মিনিট কয়েক পরে ঘুমিয়ে পড়া স্টেশনটি অপেক্ষা করে থাকে পরের সোয়ারি দেখার। আমাদের ট্রেনের সফর ছিল ১৩ ঘন্টার, বেশ আরামদায়ক এবং স্বস্তিকর। ট্রেন লেট করলে আবার মেজাজ বেগড়ানো... সে ভারী খারাপ ব্যাপার!! তা সে ট্রেন হাওড়া স্টেশন ছাড়লো রাত্তির আটটায়, আর আমাদেরও যাত্রা শুরু হলো। প্রথম স্টপ বর্ধমান হয়ে আস্তে আস্তে দুর্গাপুর, আসানসোল, চিত্তরঞ্জন হয়ে প্রবেশ করলো বিহারে। জসিডি, কিউল, মোকামা... স্টেশনগুলো দেখতে দেখতে ছোটবেলায় পড়া পূজাবার্ষিকীর কথা মনে পড়ে যাচ্ছিলো যেখানে লীলা মজুমদার, সুনির্মল বসু, হেমেন রায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়দের লেখায় এই জায়গাগুলোর নাম পড়তাম। ট্রেনের যাত্রা আমাদের বেশ ভালোই কেটেছে দু তরফেই। পরদিন সকালেই তো সে-ই আকাঙ্ক্ষিত স্থান... বেনারস!

জয় বাবা ফেলুনাথ, জয় বাবা মানিকনাথ..... সবই তো তোমাদের ভরসায়, আসাটা যেন মনে থাকে। এইসব ভাবতে ভাবতে ট্রেন এসে দাঁড়ালো বেনারস স্টেশনে। আমাদেরও এই ছোট্ট সফরের গৌরচন্দ্রিকা পেরিয়ে মূলপর্ব শুরু হবে। আহহ্, শান্তি!! Debanjan Chatterjee আর Sudipta Saha Avi দার সঙ্গে নেমে অগ্রসর হলাম হোটেল অলকায় যাওয়ার জন্য একটা গাড়ি ঠিক করতে। সঙ্গে লটবহর তো কিছু ছিলোনা মাথাপিছু একটি ব্যাগ, অতএব চলো পানসি বেলঘড়িয়া, থুড়ি বারাণসী। 😊

ক্রমশ....

Monday, April 24, 2023

"বেনারসের টুকিটাকি" (পর্ব ১)


কিতনি মুবারক হ্যায় ইয়ে শাম, অপনো সে অপনে মিলে হ্যায়ঁ.... 

হ্যাঁ, মিলন–আলাপ–আপনজনের সাথে ; সে হতে পারে মানুষের সাথে মানুষের, অন্য প্রাণীর সাথে, গাছের সাথে অথবা সবকিছু নিয়ে অপেক্ষায় থাকা কোনো জনপদের সাথেও! কাউকে যেমন দেখলে মনে হয় কতকালের চেনা, তেমন কিছু কিছু জায়গাতেও সেই টান থাকে হে! নইলে আমার মতো ঘরকুনো, অলস একজনকে নিয়ে যায় ঘরের থেকে নয় নয় করে সাতশো কিলোমিটার দূরে? কিছু দায় অবশ্য মানিকবাবুরও রয়েছে; জয় বাবা ফেলুনাথ পড়ে, সিনেমায় দেখে আরো কৌতূহল জাগলো যে! ফেলু মিত্তির বলেছিলেন কিনা "কাশী ইজ বেঙ্গলী'জ সেকেন্ড হোম লালমোহন বাবু।"

বারানসী, বেনারস, কাশী যে-ই নামই হোক, প্রায় বছর খানেক আগেই একবার অন্তত ঘুরে আসার ইচ্ছে জেগেছিল। আমার সাধারণত এরকম ইচ্ছে হয়না, কিন্তু এইবেলা হয়েছিল। কিন্তু কি জানেন, আমার বেড়ানোর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হলো সঙ্গী। হুম, আমি একটু একঘেয়ে, বদমেজাজী, খাপছাড়া... তা-ই সঙ্গীকে অনেককিছুই মানিয়ে নিতে হবেক! তা সেরকম লোকজন কি হাটেবাজারে মেলে? কে স্বেচ্ছায় ঝামেলা পোহাতে চায় মশাই? তা সে যা-ই হোক, বাল্যবন্ধু  Debanjan Chatterjee র সাথে অনেকবারই আলোচনা হয়েছে ঘুরে আসা নিয়ে, কিন্তু হয়ে উঠছিলো না! সাথে Santanava Roy বাবু, Sudipta Saha Avi আর Kaushik Chakraborty দা'রও আসার কথা হচ্ছিলো। তবে এই বচ্ছর আসার পরেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো, হ্যাঁ "উঠলো বাই তো কাশীই যাই"! ওখানকার খাদ্যসম্ভারের নানা খোঁজ পেয়েছিলাম, অলিগলিতে হয়তোবা অনেক অজানা কাহিনীর সন্ধান পেতে পারি, আর ঐ যে, নিজেদের সেকেন্ড হোম দেখে আসার লোভ.... একসাথে এতসব টুকরো হাসির ফোয়ারার আয়োজন কি সামলানো যায়? আমি তো মানুষ নাকি? তাই আমি, দেবাঞ্জন আর সুদীপ্ত দা ঠিক করলাম এইবার এপ্রিলের মাঝামাঝি, অর্থাৎ কিনা নববর্ষের প্রাক্কালে একবার দর্শন করে আসি সভ্যতার প্রাচীনতম এই নিদর্শন শহরটিকে। রায় বাবু আর রাণা দা এলে আরো জমতো কিন্তু বাধ সেধেছিল কিছু কাজ কিছু কাল... সে তো কিছু করার নেই! ট্রেনের নাম বিভূতি এক্সপ্রেস, স্টেশনের নাম চিরকালীন... হাওড়া। 

আমাদের যাত্রা শুরু এবং শেষের মেয়াদ বেশ ছোট, ১২ই এপ্রিলের বিকেল থেকে ১৬ই এপ্রিলের সকাল। অতএব, দায়দায়িত্ব কতটা বেড়েছিলো ভাবতেই পারছেন!! এই কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন সূত্রে ওখানকার রসনা তৃপ্তির হরেক ঠিকানা জোগাড় করা, ওখানকার ঘাট–রাস্তা–গলি–স্থাপত্যের দর্শন, আর আশেপাশের কিছু কিছু জায়গা পত্র দেখে সুস্থ শরীরে ফেরা; কারণ গ্রীষ্মকাল তো কারোর অধীনস্থ কর্মচারী নয়, আর আমাদের জামাইও নয় যে খাতির করবে! যা-ই হোক, শুরু থেকে শেষ... হলো ভালোই। 

একটি কথাই বলবো, বেনারসের মতো উচ্ছলিত, দিলখোলা, পুরাতনী ও আধুনিকতার বহমানা ধারাকে একইভাবে উজ্জ্বল রাখা শহর সম্পর্কে না গেলে কিস্যুই ধারণা করা যায়না! শুধু মন্দির আর জয়ধ্বনি নয়, ঘাট আর গলির ভিড় নয়; ওখানে প্রাণ আছে, তুমুল প্রাণের সঞ্চার আছে... দেখি, নিজের সীমিত ক্ষমতায় কতটা তার তুলে ধরতে পারি। পরবর্তী পর্ব নিয়ে শিগগিরই আসছি... কয়েকটা দিনের তো অপেক্ষা মোটে.... থাকছেন তো সঙ্গে?? ☺️