Monday, February 21, 2022

"কি জানি"



আজকাল খুব ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। একেবারে ছোটবেলায় দাদামাসীমার সঙ্গে নকুলেশ্বর ভট্টাচার্য লেন দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে স্কুলে যাওয়ার কথা মনে হয়; একটা পার্কে যেতাম, ইয়াব্বড় ভাল্লুক ছিলো, ক'টা হনুমান, আমাকে কোল থেকে নামাতো না, আমার বাবাও দুয়েকবার নিয়ে গেছে ; আমি এখনো সেই পার্কের পাশ দিয়ে যাতায়াত করি, ওটা বহুবছর বন্ধ ছিলো, সদ্য খুলেছে, বাচ্চারা ছুটে ছুটে খেলে, কিন্তু সেই বেঞ্চিগুলো এখন আর নেই। আমার ছোটবেলায় একটা বড় মাঠ ছিলো, চাঁদমামা, শুকতারা জমেছে আস্তে আস্তে; লোডশেডিং ছিলো, ঘামে মায়ের মুখ মুছিয়ে আস্তে আস্তে চাপড় দিয়ে ঘুম পাড়ানো ছিলো, আবারও এগিয়ে গেলাম, এরকমই হয়, আরও অনেক আগে রাত্তিরের কথা মনে পড়ে, বাবা আমাকে গান শুনিয়ে ঘুম পাড়াতেন, ব্যস্ততার মধ্যেও যখনই বাড়ি থাকতেন। আমার ছোটবেলায় সেলুনে যেতে হয়নি, নলিনী নাপিত এসে দাঁড়াতো, একটা কাঠের বাক্সে সবকিছু নিয়ে, খুব মুশকিল, সুড়সুড়ি লাগতো, আর খালি বলতো, "নড়েনা বাবু, নড়েনা, এইত্তো হয়ে গেছে... ", আমার আজকাল আর সেইভাবে সুড়সুড়ি লাগেনা। 

স্কুলে যেতাম, ভ্যানে, গোবিন্দকাকুর ভ্যানে, সেবার কি বৃষ্টি, কি বৃষ্টি, আমাকে কাঁধে নিয়ে রাস্তা থেকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলো কাকু, ফাইভ থেকে কালু কাকুর গাড়িতে, সেই গোবিন্দ কাকুই ব্যবস্থা করে দিয়েছিলো, আমি আর আমার বন্ধুরা যেতাম, আসতাম, কতো মজা হতো, গল্প করতাম, ইয়ার্কি.... মোবাইল ছিলোনা তো, অন্যদের সাথে কথা বলতে ভালো লাগতো। 

আমার মায়ের বাড়ি চুঁচুঁড়া যেতাম, লাল রঙের ৫, ৬, বা এস–৭, বাবা থাকলে ট্যাক্সিতে, আমার সাথে কখনো বাসে চড়েননি বাবা, ট্রেনে ঝালমুড়ি, আর বাদাম, আর স্টেশনে পাতলা পাতলা বই, ভূতের বই কিনতাম, রিকশা করে যেতাম, দাশরথি মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থেকে মা মিষ্টি আর কচুরি কিনতো, এমন তরকারি আর খাইনি কোথাও, ঘড়ির মোড়ে ব্যানার্জি কেবিন, টাওয়ার ভিউ, রেণু... সাদা রঙের প্লেট, আর বাটি, কাঁটাচামচ, ছুরি...  এখন অনেক রেস্তোরাঁয় খেয়ে ফিরি, কিন্তু রঙটা মুছে যায়নি। আমার দিদা অসাধারণ রাঁধতেন, তেমনই ছিলো আসন, ফতুয়া, আচার, পিঠেপুলি, হাতের লেখা, একাই চারদিকে চলাফেরা করতেন, বড় মেয়ের ছেলে তো, খাতির আলাদা ছিলো, মামাতো ভাইরা পরে এসেছে, তবে আদর ভাগ হয়নি। আমি দিদার দেওয়া আংটিটা পরি, দিদার গায়ের সুবাস আসে, একটু ক্ষ্যাপাটে ভাবনা, না? 

পুজো হতো পাড়ায়, খিচুড়ি খেতে চিরকালই ভালোবাসি, সব্বাই দিয়ে যেতো, অথবা আমি গিয়েই খেয়ে আসতাম, ভাজাভুজি চাইতাম, লজ্জা করতোনা, কেউই ভুরু কুঁচকে তাকাতোনা, পাশের বাড়ির কাকুদের কাছে দুপুরে ভাত খেয়ে আসতাম, মা ফিরে দেখতো আমার খাওয়া শেষ, এটিকেটের বালাই ছিলোনা, আমার পাড়ায় এসব আসেনি।

জন্মদিনে পায়েস খেতাম, এখনো মা সেটাই করে, আর সবাই গল্পের বই দিতো, বাড়িতেই রান্না করতো মা... সেদিন মাংস খেতে আপত্তি করতাম না, মা খাইয়ে দিতো, এখনো মাংস হলে আমি নিজে নিজে খাইনা..... এখন অবশ্য পার্টি হয়, সে ভালোই হয়েছে। 

আমার এখনো মাঝেমধ্যে এসব আবোলতাবোল ভাবতে ভাবতে হারিয়ে যেতে ভালো লাগে।