দীঘা থেকে খিদিরপুর লঞ্চ সার্ভিস! শুনেই চমকে গেলেন তো! ভাবছেন এই জিনিষটা আবার কবে চালু হলো? আরে না না ঘাবড়াবেন না। সত্যি সত্যি এই লঞ্চ সার্ভিস কোনোদিন ছিল না। ভবিষ্যতে হবে কিনা জানা নেই। তবে এই লঞ্চ সার্ভিসের গাঁজাখুরি কাহিনী ঘিরে একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল... আজ সে গল্পই শোনাই। গল্পের ঘটনা একেবারে সত্যি। কাজেই স্থান এবং কাল দুটোই অপরিবর্তিত থাকলো। শুধু পাত্রদের নাম বদলে দিলাম।
২০০৭ সালের ঘটনা। সেবার পুজোর পরে ঠিক হলো বছরের শেষে পাড়ার বন্ধুরা মিলে দীঘা বেড়াতে যাবো। সেইমত টাকা পয়সা জমিয় সবাই রেডি। বুঝতেই পারছেন একদল চ্যাংড়া ছেলেপুলে যাচ্ছে... সবার উত্তেজনা চরমে একেবারে! যথাসময়ে রওনা দিলাম এবং গোটা রাস্তা খিল্লি করতে করতে দীঘা পৌঁছেও গেলাম। আমাদের এক বন্ধু ভোলা তখন সদ্য সদ্য প্রেমে পড়েছে। প্রেমিকাকে যাকে বলে চোখে হারাচ্ছে! দীঘা বেড়াতে গিয়েও তাদের সারাদিন ফোনে ফুসুর ফুসুর চলছে। সে এক ট্যালেন্ট বটে.... কি বলছে পাশের লোকটি টের পাবে না অথচ ওপারের সঙ্গীটি ঠিক শুনতে পেয়ে যাচ্ছে! যাই হোক... প্রথম দিনটা কাটার পরেই ভোলা হঠাৎ বেঁকে বসল তাকে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দিতে হবে! সে নাকি তার প্রেমিকাকে কথা দিয়েছে পরের দিন বিকেলে ডেটিং যাবে! শুনে তো বাকি সবাই তাকে বাছা বাছা বিশেষণে ভরিয়ে দিলো প্রথমে। কিন্তু আমাদের প্রেমিক মশাই তাতেও অবিচল। তার লক্ষ্য স্থির... কলকাতা পৌঁছাতেই হবে।
এই পরিস্থিতিতে আমাদের মধ্যে বাবুর মাথায় একটা বদ বুদ্ধি এলো! এই বাবুর একটা ক্যালি আছে। মিথ্যে কথাও এত কনফিডেন্স নিয়ে বলতে পারে যে বোঝাই যায় না মিথ্যে বলছে। কাজেই ভোলাকে বোঝানোর দায়িত্বও সেই নিল। বিকেল বেলায় বাবু বললো "ভাই শোন.... খবর নিয়ে জানলাম কাল সকালে বাস সার্ভিস বন্ধ। ট্রেনের টিকিটও পাওয়া যাচ্ছে না। কাজেই তোর কলকাতা ফেরা একটু চাপের"। ভোলা তো সব শুনে বেশ হতাশ হয়ে পড়ল। বাবু বললো "চাপ নিস না....একটা উপায় আছে কলকাতা যাবার.... তবে একটু কষ্ট হবে যেতে"। ভোলা তো যেন হাতে চাঁদ পেল! বললো "হোকগে কষ্ট.... আমি যেতে রাজি। কিন্তু উপায়টা কি?" বাবু বললো "দীঘা থেকে খিদিরপুর অব্দি নাকি একটা লঞ্চ সার্ভিস চালু হয়েছে বুঝলি.... সেই লঞ্চের ক্যাপ্টেনকে বলে অনেক কষ্টে রাজি করানো গেছে। বলেছে তাকে হাওড়া নামিয়ে দেবে। কাল ভোর ভোর লঞ্চ ছাড়বে। রেডি থাকিস কিন্তু.... ফোন এলেই বেড়িয়ে পড়বি"। খুশির চোটে ভোলা সবাইকে এক কাপ করে চা খাইয়ে দিল। চা খেয়ে বাবু বললো "শুধু একটু কষ্ট করতে হবে বুঝলি... লঞ্চ নাকি হাওড়ায় দাঁড়ায় না। তাই যখন জেটির কাছ দিয়ে লঞ্চ যাবে তোকে লাফ মেরে নেমে পড়তে হবে"। সত্যি বলতে গোটা প্ল্যানটা শুনতে যতই অবাস্তব লাগুক সেই মুহূর্তে কেন জানিনা ভোলা সেটাই মেনে নিয়েছিল! আমাদের বাকি বন্ধুদের কাজ ছিল সায় দিয়ে যাওয়া। প্রচণ্ড হাসি চেপে আমরা সেই কাজই করে গেলাম সারাদিন ধরে।
সেদিন সন্ধ্যে হতেই তার ব্যাগপত্র গোছানো শেষ। সবার আগে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়েও পড়ল। পরদিন ভোরবেলা উঠে বাবুদের ঘরে গিয়ে দরজা ধাক্কা ধাক্কি শুরু করল। লঞ্চের ক্যাপ্টেনের ফোন নম্বর দিতে হবে। বাবু ঘুমের ঘোরেই বলল "ক্যাপ্টেন ফোন করে বলেছে বিশেষ কারণে লঞ্চ ক্যান্সেল... তুই ঘুমো গিয়ে"। নাছোড় ভোলা দুটো গালাগাল দিয়ে বললো "তুই ঘুমো... আমি নিজেই গিয়ে ব্যাপারটা দেখছি"। নীচে নেমে হোটেলের একজনকে জিজ্ঞেস করল খিদিরপুরের লঞ্চ কোথা থেকে ছাড়ে। হোটেলের লোকটি তো আকাশ থেকে পড়ল! দীঘা থেকে খিদিরপুর আবার কবে থেকে লঞ্চ চালু হলো! পুরো ব্যাপারটা শুনে ভোলা বুঝতে পারল তাকে মুরগি করা হয়েছে। তারপর? আন্দাজ করতেই পারছেন কোন কোন বিশেষণে আমাদের ভরিয়ে দিয়েছিল সে! 😂
সেই ঘটনার পর এতগুলো বছর পেরিয়ে গেছে। ভোলার বিয়ে হয়েছে তার সেই প্রেমিকার সঙ্গেই। তবু এখনও পাড়ার আড্ডায় দীঘার প্রসঙ্গ উঠলেই অবধারিত ভাবে আসে সেই দীঘা খিদিরপুর লঞ্চের গল্প। আজও আমাদের কপালে জোটে বাছা বাছা বিশেষণ! 😂😂
😊dhasu.... Just fatafati
ReplyDeletekhasa !
ReplyDeleteDarun!
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteবাহ্ খুব ভালো লাগলো
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteBhola ki Papu!!��
ReplyDelete