Saturday, August 27, 2022

মেট্রো চরিত


মেট্রো রেল কলকাতার অন্যতম গর্ব। ব্যস্ত অফিস্টাইমে যানজটহীন সওয়ারি হিসেবে মেট্রোর বিকল্প বোধহয় খুব কমই আছে। সেই ১৯৮৪তে পথ চলা শুরু করার পর থেকেই "পাতাল রেল" (তৎকালীন) খানিকটা "বোরোলিনের" মতোই (বঙ্গ জীবনের অঙ্গ) কলকাতা জীবনের অঙ্গ হয়ে গেছে। সময়ের সাথে সাথে পরিসর বেড়েছে মেট্রো রেলের। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মানুষের ভিড়। আজকাল অফিস টাইমে খানিকটা লোকাল ট্রেনের মতোই গুঁতোগুঁতি ধাক্কাধাক্কি হওয়াটা জলভাত ব্যাপার হয়ে গেছে মেট্রো যাত্রীদের কাছে। তবে কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া যায়... তাই এটুকু সমস্যা মেনে নেওয়াই যায় আরকি!

রোজ কতশত মানুষ মেট্রোতে নিজের গন্তব্যে পাড়ি দেন। একটু লক্ষ্য করলেই এইসব মানুষের মধ্যেই প্রচুর মজার উপাদান পেয়ে যেতে পারেন! চলুন... আজ বরঞ্চ এইরকমই কিছু মানুষকে নিয়ে হালকা মজার আলোচনা করা যাক! 😀

১. দৌড়বিদ - প্রথমেই এঁদের কথা না বললেই নয়! এঁদের সবসময় খুব তাড়া! ধরুন প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ঢুকছে... এস্কেলেটরে জম্পেশ ভিড়... সবাই আগত ট্রেনটি ধরবে.... এমন সময় এই দৌড়বিদরা হটাৎ জেগে ওঠেন! পাক্কা প্রফেশনাল ফুটবলারদের মতো সামনের ভিড় খানিক গুঁতিয়ে, খানিক ডজ্ করে এঁরা মেট্রো ধরতে অগ্রসর হন! তবে পাশের সিঁড়ি খালি থাকলেও এঁরা নিজেদের "স্কিল" ভুলেও সিঁড়িতে দেখান না... ওখানে বড্ড খাটুনি যে! 😁 

এছাড়াও বাড়ি ফেরার সময়তেও এঁদের তাড়া দেখবার মতো! মেট্রোর গেট থেকে প্ল্যাটফর্মে পা রেখেই যেভাবে দৌড় শুরু করেন তাতে উসেইন বোল্ট লজ্জায় পড়ে যাবেন! যেন গেট থেকে আগে বের হলেই মেট্রো কর্তৃপক্ষ পুরস্কৃত করবেন! 😆

২. নট সো সিনিয়র সিটিজেন - যাঁরা মেট্রোতে যাতায়াত করেন তাঁরা সবাই সিনিয়র সিটিজেন সিট সম্বন্ধে অবগত। এই বিশেষ সিট খালি থাকলে কম বেশী সবাই বসে যাই এখানে। আবার বয়স্ক কেউ উঠলে বেশিরভাগ লোকজনই সিট ছেড়ে দেন। কিন্তু একটি বিশেষ সম্প্রদায় আছেন যাঁরা সিট ছাড়তে অপরাগ! কোনও বয়স্ক যাত্রী এঁদের সিট ছেড়ে দিতে বললে এমন ভাবে তাকান যেন সিট নয় কিডনি চেয়ে ফেলেছে! 😆 অনেকেই আবার তক্ষুনি প্রচণ্ড ঘুমিয়ে পড়েন! এক দুবার ডাকলেও উঠতে চান না। অবশ্য সহযাত্রীদের হস্তক্ষেপে শেষমেষ সিট ছাড়তে বাধ্য হন।

৩. মরাল পুলিশ - এঁদের আবার সমাজের অবক্ষয় নিয়ে দারুণ চিন্তা! বিশেষত ট্রেনে কোনও প্রেমিক যুগল উঠলেই এঁরা খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন! তাঁদের সময় কি ছিল আর বর্তমানে সমাজের কি হাল এটাই মূলত এঁদের আলোচনার বিষয়! এমনিতে আলোচনা অবধি ঠিক আছে কিন্তু কেউ কেউ আবার অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে পড়লে গোল বাঁধে তখন! 🙁

৪. ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যায় - অফিস টাইমে আজকাল ভিড় ব্যাপারটা জলভাত হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে এত ভিড় হয়ে যায় যে ঠিকমতো দাঁড়ানোই দায় হয়ে পড়ে। হালকা ধাক্কাধাক্কি চলতেই থাকে যার বেশিরভাগটাই অনিচ্ছাকৃত। কিন্তু কিছু মানুষ থাকেন যাঁরা ওই যাকে বলে "ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যায়"! এঁরা অনেকটা মোবাইলের টাচ স্ক্রিনের মত! অল্প টাচ লাগলো কি দপ করে জ্বলে উঠল! নিজেরাও যে ভিড়ের মধ্যে অন্যকে ধাক্কা দিচ্ছেন সেই ধারণা অবশ্য এঁদের মগজে ঢোকানো দুষ্কর! 😆

৫. বই পোকা - এঁরা একটু ধির স্থির প্রকৃতির। চুপ চাপ মেট্রোয় উঠে একটা অপেক্ষাকৃত খালি জায়গা খুঁজে প্রথমেই দাঁড়িয়ে পড়েন। বসার জায়গা মিললে তো কথাই নেই! একটু পরিস্থিতি বুঝে নিয়ে ব্যাগ থেকে বই বের করে সোজা তার মধ্যেই ডুবে যান। তারপর দুনিয়া গোল্লায় যাক... বই পড়ায় প্রভাব পরে না! শুধু মাঝে মাঝে মুখ উঠিয়ে দেখে নেন গন্তব্য এসে গেল কিনা। ও হ্যাঁ... আমিও নিজেও কিন্তু এই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত! 😆

এছাড়াও আরো কত ধরণের মানুষ দেখতে পাবেন। কেউ খালি সিট দেখেও বসতে চান না। সহযাত্রীরা খালি সিট দেখিয়ে দিলেও সামান্য হেসে অথবা মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দেন তিনি দাঁড়িয়েই খুশি! কেউ আবার আপাতদৃষ্টিতে ভর্তি সিটের মধ্যেও বসার জায়গা খুঁজে নেন! সিটের সামনে দাঁড়িয়ে রীতিমত "হেড" কাউন্ট করে বসার জায়গা বের করে নেন! কেউ রাজনীতি নিয়ে তর্ক করেন তো কেউ নিত্য দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত থাকেন। এছাড়াও খেলাধুলো, অফিসের চাপ এইসব নিয়ে আলোচনা বাকবিতণ্ডা তো লেগেই থাকে। আসলে... আমরা সবাই... হয়ত নিজেদের অজান্তেই এইসব চরিত্রগুলির অংশ হয়ে যাই। তাই এই লেখাটি কাউকে ছোট করার জন্য নয়। শুধুমাত্র রোজকার ব্যস্ত জীবনযাত্রার মাঝে মজার কিছু মুহূর্ত তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই লেখা। আশাকরি ভাল লাগবে। 😀