Friday, September 30, 2022

অথ কচুরি কাহিনী


ঘুম থেকে উঠে প্রাতঃকৃত্য সারার পরে প্রাতঃরাশ, এই দিয়েই দিনের শুরু হয়, আর ইংরেজিতে একটা প্রবাদই আছে morning shows the day. আজকাল তো এই জলখাবারের নানান ধরণ এসেছে, সারা বিশ্বের খাদ্যাখাদ্য ডাইনিং টেবিলে শোভা পায়। তার উপর রয়েছে ডায়েটিংয়ের বাঁশি। তা সে যা-ই হোক না কেন, ভোরবেলার ঝলমলে রোদ আরেকটু উজ্জ্বল হয়ে যায় কি দেখে? আরকিছুই নয়, কড়াইয়ে ঘি অথবা ডালডায় ভাজা সোনালী লালচে গোলাকার বস্তু দেখে; যার নাম কচুরি।

অরিজিৎ ঘোষ দার অনেকদিনের ইচ্ছে ছিলো সকালবেলায় বিভিন্ন জায়গায়, তা সে উত্তর হোক বা দক্ষিণ কলকাতায়, কচুরি খাবে। একাজে সেকাজে সেটা কিছুদিন পিছিয়ে গেলেও মাথায় ছিলো বৈকি৷ কিন্তু, আমাদের জীবনের আরেকটি অঙ্গ তো আলস্য, সেটা ঠেকিয়ে এতো সকালে ছুটোছুটি করাও তো কঠিন। তাই, প্রায় চার মাস পরে আজ আমরা ক'জন বেরিয়ে পড়েছিলাম এই শুভকাজ সম্পন্ন করতে। রায় বাবু সামান্য অসুস্থ থাকায় যোগ দিতে পারেনি। তাই, আমাদের দেবাঞ্জন, সুদীপ্ত সাহা দা, অরিজিৎ ঘোষ দা আর এই অধম বেরিয়ে পড়লাম কচুরি অভিযানে। 

শুরুটা করলাম হরিশ মুখার্জি রোডের বিখ্যাত বলবন্ত সিংয়ের ধাবায়। অতিপরিচিত এই খাদ্যালয়ে হিংয়ের কচুরি আর আলুর তরকারি, কাঁচালঙ্কার আচার সহযোগে, কার না ভালো লাগে? এক প্লেটে চারটি গরমাগরম কচুরি, তারপর ভাঁড়ে গরম চা, মেজাজ খুশ হয়ে গেলো যাকে বলে! কিন্তু, সাথে আরেকটি কথাও আলোচনা করে নিলাম যে এরপরে তো আরো দুয়েকটা জায়গায় যেতে হবে, তাই ভাগযোগ করে খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। 

Balwantsinghdhaba, kolkatastreetfood, foodblogger, foodblog, kolkata, bengaliblogger

Balwantsinghdhaba, kolkatastreetfood, foodblogger, foodblog, kolkata, bengaliblogger

অতঃপর ট্যাক্সি ছুটলো শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ের আদি হরিদাস মোদকের দিকে। এটিও সুপ্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী এবং অত্যন্ত পরিচিত বটে। প্রায় ২৫০ বছর ধরে ইতিহাসের অংশ হয়ে যাওয়া এই স্থানের ব্যতিক্রমী চেহারা হলো পরিবেশনের ধরণে, কলাপাতায়। সেখানে পাওয়া গেলো কচুরি, এবং ছোলার ডালের তরকারি। বেশ সুস্বাদু, চটজলদি জায়গা পাওয়া যায়না সেটাই স্বাভাবিক। এখানে মোটামুটি খান তিনেক কচুরি গলাধঃকরণ করে ধীরেসুস্থে জলপানের পরে একটি সিগারেট ধরালাম।  

HaridasModak, kolkatastreetfood, foodblogger, foodblog, kolkata, bengaliblogger

উত্তর কলকাতায় এসে একটু গঙ্গা দর্শন না করলে কি হয়? তাই, পদব্রজে টুকটুক করে এগোলাম বাগবাজার মায়ের ঘাটের দিকে। সেখানে গঙ্গা পাড়ে বসে খানিকক্ষণ হাওয়া খেয়ে যাবো পটলার কচুরির পানে। পটলার কচুরি...... বাগবাজার গিয়েছেন অথচ এখানে ঢুঁ মারেননি এরকম লোক কে জানে আছে কিনা! ৯৩ নট আউট, স্টেডি ফুটস্টেপ, এবং অসাধারণ লাইন ধরে ড্রাইভ করে চলেছে। আহা, শীতকালের দোরগোড়ায় এসে একটু ক্রিকেটের উপমা দেওয়াই যায়, কি বলেন? এখানে কচুরির সাথে তরকারির স্বাদে আরেকটু প্রচলিত ধরনের ছোঁয়া পেলাম। ততক্ষণে পেট বেশ ভরেছে, এবং মন তো অবশ্যই। 

PotlarKochuri, kolkatastreetfood, foodblogger, foodblog, kolkata, bengaliblogger

কিন্তু, সব ভালো যার শেষ, তাই না? তা এদিকে এসে পুঁটিরাম হবেনা? না না, আমরা তেমনটা ঠিক নই। অতএব, করলে স্কোয়ারে অল্পসময় জিরিয়ে নিয়ে শেষ আখড়া কলেজ স্ট্রিটের পুঁটিরাম। সেখানে অবশ্য আরেকটু যোগ হলো কচুরির সঙ্গে টকদই, আর রসমালাই। আমাদের সুদীপ্ত দার একটু মিষ্টিমুখ না করলে কেমন খালিখালি লাগে কিনা! 

PutiramSweets, kolkatastreetfood, foodblogger, foodblog, kolkata, bengaliblogger

মন ভালো লাগে, চারপাশ কেমন যেন বদলে যায় সুখাদ্য গ্রহণের পরে। অতএব, এদিকের পাট চুকিয়ে আমরা গেলাম ধর্মতলায়। মশাই, ৪০/- টাকায় সেই লস্যি, উফফ!! খোয়াক্ষীর, কাজু, কিশমিশ, চেরি দিয়ে সুসজ্জিত। এটা এক গ্লাস খেলেই তো পেট ভরে যায়! 

Lassi, kolkatastreetfood, foodblogger, foodblog, kolkata, bengaliblogger

অতঃপর, বিদায় নেওয়ার পালা, কিন্তু আজ প্রাতঃরাশের জন্যে এই ছোট্ট সফর মনে থাকবে, অনেকদিন পরে সকালে ঘোরাঘুরি হলো, আর আমাদের খাদ্যসফরও আরেকটি ভোরেই শুরু হয়েছিল। পরেরবার অবশ্যই অন্যরকম আনন্দময় এক অধ্যায় নিয়ে আসবো এই-ই আশা। আপাতত, পুজো সব্বার ভালো কাটুক। ☺️