Monday, April 10, 2023

একটু ভাজাভুজি, একটু অনিয়ম 😋


কলকাতার অনেক কিসিমে’র নাম আছে। সে কল্লোলিনী তিলোত্তমা থেকে শুরু করে নেহরুর বলা মিছিলনগরী... ইতিহাসের কিছুই এর না-দেখা নয়। কিন্তু আমি বলি আমার শহর খাদ্যনগরী। হ্যাঁ, হেন জায়গা নেই যেখানকার খাদ্যসম্ভার এখানে অমিল, আর কিছু কিছু ব্যাপারে তো কলকাতার জুড়ি মেলা ভার। আমি চিরকালই খেতে ভালোবাসি আর এই ভাজাভুজির দিকে ঝোঁকটা বেশিই। নোনতা স্বাদই জিভে ঠেকেছে, কি আর করা! কদিন ধরেই তাই ভাবছিলাম উত্তর কলকাতার দুয়েকটা নামজাদা ঐতিহ্যবাহী স্থান দর্শন করে আসার। সে আর হয়ে ওঠেনা, কিন্তু আজ মওকা পেয়ে দলবেঁধে গেলাম আস্বাদন গ্রহণ করতে। আজ আমাদের দল বেশ ভারীই ছিলো। আমি, Debanjan, Koushiki দি, ChiranJoy, Arijit Ghosh দা, Sudipta দা, Jayee দি.. সঙ্গে Snehasish এবং Anwesha অফিসফেরত সোজা যোগ দিলো। সঙ্গে পেয়ে গেলাম পথে যেতে যেতে Pial আর Roy বাবুকে, দুপুরে বলেছিলো হয়তোবা চলে আসতেও পারে!! তা যা ভাবা সেইমতন সবাইকে বলে দিয়েছিলাম নিরঞ্জন আগারের সামনেই সাক্ষাৎ করতে। 

আমাদের এতজনের জন্য তো আর চেয়ার-টেবিল খালি রেখে বসে থাকবেন না তাঁরা, অগত্যা বেশ খানিকটা অপেক্ষা করে বসার সুযোগ পেলাম বটে, কিন্তু বিধি বাম! ১৯২২ এ স্থাপিত এই বিখ্যাত রেস্তোরাঁয় বিষ্যুদবার সেখানকার সিগনেচার আইটেম ডিমের ডেভিল হয়না!! কি করা যায়? কুছ পরোয়া নহী, বলা হলো ফাউল কাটলেট আনতে। সত্যিই দুর্দান্ত খেতে, মুচমুচে এবং সুস্বাদু। তারপর দোনোমোনো করে ডিমের চপ অর্ডার দিলাম, কিন্তু না!! ওটি ভালো লাগেনি একেবারেই, বেসনের আস্তরণে ডিম ঠিক জমলো না। একদিন অন্য বারে এসে ডেভিল গ্রহণ করতে হবে ভেবে দ্বিতীয় গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হাঁটা দিলাম। এইবার আমরা যাবো অ্যালেন কিচেন। 

১৯২৫ এর অ্যালেন কিচেনেও খানিকটা সময় অপেক্ষা করার পরে জায়গা পেলাম, কারণ একসঙ্গে এতজনকে স্থান সঙ্কুলান করাটাও মুশকিল কিনা! খুব বেশিক্ষণ নয় অবশ্য, অর্ডার দেওয়া হয়েছিল এখানকার বিখ্যাত পদ চিংড়ির কাটলেট। উলস্!! ঘিয়ে ভাজা চিংড়ির এই কাটলেট স্রেফ চমৎকার বললেও বিবরণ দেওয়া যায়না মশাই, গিয়ে খেয়ে আসতে হবে। যাক, ডিমের চপের দুঃখ অচিরেই ভুলতে পারছিলাম বৈকি। ততক্ষণে আবার টিপটিপ দুফোঁটা গড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। যা-ই হোক, দুয়েক ঢোঁক ঠাণ্ডা পানীয়ে চুমুক দিয়ে এইবার আজকের তৃতীয় তথা শেষ গন্তব্য, মণি রেস্তোরাঁ।

পটলার কচুরির অদূরেই এই ছোট্ট আস্তানাটি আজকের অভাবনীয় হিরো/হিরোইন/সেন্ট্রাল ক্যারেক্টর। এমন সুস্বাদু মাছের কচুরি, তাও মাত্র ১০/-(দশ) টাকায়, সত্যি বলছি ভাবতেই পারিনি। বলরাম বাবুর নাম, কারিগরী মাধুর্য আমি শুনেই ছিলাম সুদীপ্ত দার কাছে, আজ একেবারে হৃদয়ে পশিয়া গেলো। ফাউল কাটলেট যদি হয় শেহওয়াগের ভয়ডরহীন ব্যাটিং, ডিমের চপ একেবারে সদাগোপান রমেশ। চিংড়ির কাটলেট ধ্রুপদী রাহুল দ্রাবিড় আর মণি রেস্তোরাঁর মাছের কচুরি? আমার মতে আনসাং হিরো ভিভিএস লক্ষ্মণ। তারপর অবশ্য মিষ্টিমুখের পালা, বড়ো ভালো কাঁচা আমের স্বাদের সন্দেশ টুকটুক করে খান দুয়েক পেটে পুরে মধুরেণসমাপয়েৎ হলো। আজ এতজন একসাথে মিলে হইহই করে সন্ধ্যাটা বড়ো সুন্দর কাটলো। 

আবার একদিন হবে, শীতের সন্ধ্যায়। ফেরার পথে এইসব আলোচনা করতে করতেই দক্ষিণের বৃষ্টি গায়ে মেখে বাড়িতে। এ এক দারুণ আনন্দের ব্যাপার বটে। 😍