Friday, February 4, 2022

"পড়েছ মোগলের হাতে, সিনেমা যেতে হবে সাথে"

মাঝেমাঝে পেছন ফিরে তাকানো ভালো জানেন। আবার, অনেক সময় তাকাতেও হয়না, সামনে ঘটে যাওয়া দৃশ্যাবলী আপনাকে বেশ কয়েক বছর, অথবা কয়েক দশকও পিছিয়ে নিয়ে যেতে পারে, এমন হয়েই থাকে। সবসময়ই যে সেসব ঘটনা খুব চমকপ্রদ, খুব উত্তেজক হবে তা নয়, নিছকই ছোট্ট, কিন্তু নিজের কাছে একটা ভালোলাগার রেশ রেখে যায়। 

আমার ছাত্রজীবনে আট বছর, মানে দন্তচিকিৎসা, এবং আনুষঙ্গিক কাজের আটটি বছর অতিবাহিত হয়েছে কর্ণাটকের রাজধানী ব্যাঙ্গালোরে, অধুনা যাকে বেঙ্গালুরু বলা হয়। তা হোক, আমি পুরনো নামেই ডাকি, এটাও ভালো লাগার একটা অংশ। তা, সেখানে থাকাকালীন বহুবিধ ঘটনা, নানারকমের ঘটেছে, কিছু মজার, কিছু বা ততটা মজার নয়। সেসব লিখতে গেলে মহাভারতের এক-তৃতীয়াংশ হয়ে যেতেই পারে, আর আমিও বুঝলেন না, বেদব্যাস নই। আমি একটা ছোট্ট ঘটনার কথা বলবো, যা প্রায় ১৭/১৮ বছর আগে ঘটেছিলো, দেখুন, কেমন লাগে? 

সেসময় ব্যাঙ্গালোরে পথঘাট খুব একটা সুবিধার ছিলোনা, বিশেষত শহরের যে প্রান্তে আমার কলেজ, এবং ছাত্রাবাস, সেই রাস্তা ডিয়েগো আলভারেজ, শঙ্কর, বা গ্যারিবল্ডির খুব পছন্দ হতে পারতো, কিন্তু আমি তো ছাপোষা মানুষ, তা-ই খানাখন্দ, আর ট্রাফিকের জাল বিস্তৃত বানারঘাট্টা রোড যখনই পেরোবার কথা মনে হতো, বেজায় মেজাজ খিঁচড়ে যেতো! আর ছিলো অটোচালকদের তুঘলকি চাল! কিছুতেই তাদের রাজি করানো যেতোনা মশাই, আর রাজি যদিওবা হতো, এমন ভাড়া হেঁকে বসতো,,যে হৃৎকম্প হবেই!! কি বললেন, মিটার?  হ্যাঁ, মিটার ছিলো বৈকি, ঐ আমাদের শরীরের অ্যাপেন্ডিক্স যেমন, কাজে লাগেনা, কখনো হয়তো লাগতো! 

তা, সেদিন ছিলো শুক্রবার, আমাদের কলেজ শুরু হতো সকাল ৯টায়, চলতো বেলা ৪টে, মাঝে এক ঘন্টা লাঞ্চ ব্রেক,  পরে যদিও সময় পালটে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টো, কারণ আমরা এতো সুবোধ ছিলাম যে লাঞ্চের পরে আর ক্লাসে গিয়ে অধ্যাপকদের বিরক্ত করতে চাইতাম না! কিন্তু, সেদিন ছিলো ছুটি, সকালে স্বভাবতই উঠলাম ঘুম থেকে বেলা করেই( সারারাত রাজসূয় যজ্ঞে উপস্থিত থাকলে, আর কিঞ্চিৎ পানাহার করলে অমন তো হবেই)! আমার সিনেমা দেখার খুব নেশা সেসময়, মানে সপ্তাহে নিদেনপক্ষে দুটো, তিনটে তো বটেই, কখনো এমনও হয়েছে যে সপ্তাহে গোটা পাঁচেক সিনেমা দেখে ফেলেছি। স্বাগত সিনেমায় আমরা ক'জন মোটামুটি নিয়মিত দর্শক বলা যায়! মাঝেমধ্যে তো হিন্দি/ ইংরেজি না পেলে কন্নড়, তেলুগু, তমিড় ছবিও.. যাক, সেসব উপাখ্যান অন্য কোনো দিন। তা, যা বলছিলাম, সেদিনও ভেবেছিলাম কিছু একটা দেখবোই সিনেমা! কিন্তু, সিনেমার প্রযোজক, পরিচালক তো আমার বেয়াই–বোনাই নন, যে রোজ রিলিজ করবেন! রুমমেট তখনও নিদ্রামগ্ন, স্বপ্নে কাকে দেখছিলো কে জানে, হাসি লেগেছিলো ঠোঁটের কোণে, বোধহয় স্বপ্নসুন্দরী কেউ হবে! যাকগে, আমি খুঁজেপেতে দেখলাম, আরে!!! মেঘ না চাইতেই এ তো জল!! অমিতাভ বচ্চনের "খাকী" রিলিজ করেছে!! ওরেব্বাস! তাহলে আমাকে আর পায় কে?? কিন্তু, বিধি বাম, সেদিন কলেজ আয়োজন করেছে "নবীনবরণ", গালভরা নাম " ফ্রেশার্স ওয়েলকাম"! যাচ্চলে, আরে বাবা, ফ্রেশার্স ওয়েলকাম তো হবেই, এন্তার হয়েই চলেছে, কিন্তু গুরুর সিনেমা বাসী হলে দেখবো?? এ কি মানা যায়!!
 
মাথায় ঘুরছে, যেমন করে হোক যেতে তো হবেই, রুমমেটের ঘুম ভাঙলো, তার আবার ঘুম থেকে উঠে খানিকক্ষণ লাগতো পৃথিবীর চালচলন বুঝতে, আশেপাশের সাথে ধাতস্থ হতে! সেসব হওয়ার পরে ওকে বললাম, "ওরে, সিনেমায় যাবো সন্ধ্যায়, আর তুইও যাবি, বুঝলি?", পরবর্তীতে ওর সাথে অনেক সিনেমা দেখেছি অবশ্য, বেচারি না বুঝেও কতবার যে বেজার মুখে হলে বসে থেকেছে, ভাবলেও হাসি পায়! তা সে তো হলো, সারাদিন ভাবছি কি করে সিনিয়রদের চোখ এড়িয়ে টুক করে কেটে পড়া যায়! কলেজ, এবং হোস্টেল একই ক্যাম্পাসে হওয়ায় একবার সেই এলাকা টপকাতে পারলেই তো কেল্লাফতে! তা, সেরকমই ভেবেচিন্তে বিকেলে সবাই যখন সাজগোজ করতে ব্যস্ত (আমাদের ড্রেস কোড ছিলো স্যুট), আমি আর রুমমেট আস্তে আস্তে বেরিয়ে গেলাম হোস্টেল থেকে, নিয়ে যে-ই না কলেজের দ্বিতীয় গেট পেরোতে যাবো, একজন সিনিয়রের চোখে পড়ে গেলাম, " কি ব্যাপার, কোথায় যাচ্ছ? একটু পরে অডিটোরিয়ামে প্রোগ্রাম শুরু! ", আমার মুখ থেকে তৎক্ষনাৎ বেরিয়ে গেলো, "স্যার, ওর মেসোমশাই অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি, হার্ট অ্যাটাক, খুব সিরিয়াস কন্ডিশন, দেখে আসি", সেই সিনিয়র তখন শশব্যস্ত হয়ে নিজেই ছুটলো বাইক নিয়ে একটা অটো ডেকে আনতে( স্থানীয় ছেলে তো, ট্যাঁফোঁ করেনি), ফিরে এসে আমাদের বলে দিলো " আমি বলে দিয়েছি কোথায় যেতে হবে, তোমরা একদম চিন্তা কোরোনা, উনি সুস্থ হয়ে যাবেন, এই যে আমার ফোন নাম্বার, কিছু দরকার হলেই জানিও", আমরা তো হ্যাঁ হ্যা নিশ্চয়ই বলে একলাফে অটোয়, অবশ্য আমার বন্ধু তখনও হতভম্ব, মানে ওর মাসীই নেই কিনা, তার আবার... যাকগে, ভালো কাজের জন্য এইটুকু করতেই হয়! অটোয় উঠে আমরা তো ভাঙা ভাঙা কন্নড়ে বলে দিলাম "যাবো আমরা স্বাগত থিয়েটার, বুঝলেন দাদা?", ড্রাইভার তো অবাক, এই নাকি কে একজন অসুস্থ বলে ওকে ডেকে আনলো, তা যা-ই হোক, আমরা সঠিকভাবে সঠিক সময়ে পৌঁছে গেলাম। সিনেমাটা তো অনেকেই দেখেছেন, সেই গপ্পো নাহয় থাক!
 
এইবার হলো মজা!! আমরা যখন ফিরলাম, সেসময় প্রোগ্রাম মোটামুটি অনেকটাই হয়ে গেছে, ফিরে চুপচাপ অডিটোরিয়ামের এক কোণে চুপ করে বসে পড়লাম, অনুষ্ঠান হয়ে গেলো ইত্যাদি ইত্যাদি। নৈশভোজের পরে আমরা ফিরলাম হোস্টেলে, নিয়ে সবেমাত্র আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে, বাড়িতে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে বসিচি, দরজায় ঠকঠক!! খুলে দেখি, আমাদের একজন সিনিয়র হাসিমুখে দাঁড়িয়ে, "কাল আমরা সবাই মিলে " খাকী" দেখতে যাচ্ছি, দাও, পঞ্চাশ টাকা করে! ", লে হালুয়া!!! এইমাত্র তো সেটাই দেখে এলাম..... তা সে তো বলা যায়না, আমি তাকাচ্ছি রুমমেটের দিকে, ও তাকাচ্ছে আমার দিকে!! এদিকে সিনিয়র বলে উঠলো, " আরে, অভীক!! অমিতাভের সিনেমা, তুই কি ভাবছিস এতো!!!", ঠিক কথা, এরপর গাঁইগুঁই করলে সন্দেহ করবে, তা-ই আরকিছুই বলার সুযোগ না দিয়ে আমি বলে দিলাম, "হ্যাঁ হ্যাঁ, আলবাত, আমরা দুজনেই যাবো!! অমিতাভের সিনেমা কেউ ছাড়ে??", উত্তর শুনে রুমমেট তো হুব্বা!! সিনিয়র টাকা নিয়ে চলে যাওয়ার পরে ও বললো, "এটা কি হলো ঠিক? এ-ই তো সিনেমাটা দেখে এলাম, আবার...?, " না গেলে, কতরকম প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো ভাব, হুঁহুঁ, জবাবদিহি করতে গিয়ে জান কয়লা হয়ে যেতো!, "তাই বলে একই সিনেমা, তা-ও পরপর দুদিন?", " হ্যাঁ, দুদিন, একে বলে পড়েছ মোগলের হাতে, সিনেমা যেতে হবে সাথে"! আজ এতবছর পরেও সেদিনের কথা মনে পড়লে বড্ড মজা লাগে, ভাবলাম আপনাদের সাথেও ভাগ করে নিই!

Thursday, February 3, 2022

বৃশ্চিকচক্র: একটি পাঠ প্রতিক্রিয়া

বই: বৃশ্চিক চক্র

লেখিকা: পিয়া সরকার

প্রকাশনা: আনাড়ি মাইন্ডস

দাম: ৪০০/-

ধরুন আপনি খাঁটি স্কচ খাচ্ছেন। কি ভাবে খাবেন? এক নিঃস্বাসে হুস করে খেয়ে নেবেন? নাকি আস্তে আস্তে তাড়িয়ে তাড়িয়ে স্বাদ গন্ধ উপভোগ করে খাবেন? ঘটনা হচ্ছে স্কচ বিলাসী মাত্ৰই জানে দ্বিতীয়টাই সেরা উপায়। লেখিকা পিয়া সরকারের লেখা এই অনবদ্য গ্রন্থটি অনেকটা সেরা স্কচের মতো  যার ধীরে ধীরে উপভোগ করতে হয়।
   
গ্রন্থটি দুটি নভেলের সমষ্টি। প্রথম খন্ড বৃশ্চিক। উপন্যাসটি এর আগে ২০২০ সালে "একচালা"
 পূজাবার্ষিকীতে প্রকাশিত হয়। নবগ্রাম বলে একটি জায়গায় এক দাপুটে নেতার মেধাবী ছোট মেয়ে আকস্মিক ভাবে খুন হন। সেই কেসের তদন্ত করতে আসেন এস আই দর্শনা বসু যাঁর অতীতও অতীব কুয়াস্বাচ্ছন্ন। কিভাবে অতীত ও বর্তমান মিশে যায় এবং মানুষের লোভ সব শেষ করে দেয় সেটাই এই উপন্যাসের পটভূমি। অসাধারণ চরিত্র চিত্রন এবং সাধারণ পটভূমির অসাধারণ বর্ণনাই এই উপন্যাসকে এক অন্য মাত্রা দেয়। পুলিশ প্রসিডিওরের খুব সুন্দর বর্ণনাও এক অন্য মাত্রা দেয় এই উপন্যাসকে। কোনও সময় মনে হয় না যে লেখিকা ইনফো ডাম্পিং করেছেন। সবমিলিয়ে রীতিমত উপভোগ্য এক উপন্যাস!
  
বইয়ের দ্বিতীয় ও শেষ উপন্যাস বৃশ্চিকচক্র। বৃশ্চিকের ঘটনা শেষ হবার ছমাস পর দর্শনার পোস্টিং হয় বাঘমুন্ডি থানাতে। পোস্টিং পাবার দিন থেকেই সূচনা হয় এক হত্যালীলার। খুন হন মাওবাদী কমান্ডার থেকে অধুনা দাপুটে নেতা নিশীথ মাহাতো। অপরদিকে রহস্যজনক ভাবে খুন হন দর্শনার গণেশ দা। কে নিরঞ্জন সেন? ডাক্তার উমানাথ কি চান? সব প্রশ্নের উত্তর এই উপন্যাসের শেষে পাবেন আপনি। সব থেকে ভালো দিক হচ্ছে শেষ অব্দি আপনি বুঝতে পারবেন না কে অপরাধী বা তার মোটিভ কি? এই গল্পের আর এক সম্পদ হচ্ছে পুরুলিয়ার বর্ণনা। এতটাই জীবন্ত যেন মনে হবে আপনি পুরুলিয়ায় পটভূমিতে বসে আছেন। 

সিম্পলি অসাধারণ এই বই সেই গুটিকয় বইয়ের একটা যেটা না পড়লে সত্যি আপনি অনেক কিছু হারাবেন। তো পাঠক দেরী কিসের??

Monday, January 31, 2022

এক অবাস্তব লঞ্চ সার্ভিস এবং এক প্রেমিকের গল্প

দীঘা থেকে খিদিরপুর লঞ্চ সার্ভিস! শুনেই চমকে গেলেন তো! ভাবছেন এই জিনিষটা আবার কবে চালু হলো? আরে না না ঘাবড়াবেন না। সত্যি সত্যি এই লঞ্চ সার্ভিস কোনোদিন ছিল না। ভবিষ্যতে হবে কিনা জানা নেই। তবে এই লঞ্চ সার্ভিসের গাঁজাখুরি কাহিনী ঘিরে একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল... আজ সে গল্পই শোনাই। গল্পের ঘটনা একেবারে সত্যি। কাজেই স্থান এবং কাল দুটোই অপরিবর্তিত থাকলো। শুধু পাত্রদের নাম বদলে দিলাম।

২০০৭ সালের ঘটনা। সেবার পুজোর পরে ঠিক হলো বছরের শেষে পাড়ার বন্ধুরা মিলে দীঘা বেড়াতে যাবো। সেইমত টাকা পয়সা জমিয় সবাই রেডি। বুঝতেই পারছেন একদল চ্যাংড়া ছেলেপুলে যাচ্ছে... সবার উত্তেজনা চরমে একেবারে! যথাসময়ে রওনা দিলাম এবং গোটা রাস্তা খিল্লি করতে করতে দীঘা পৌঁছেও গেলাম। আমাদের এক বন্ধু ভোলা তখন সদ্য সদ্য প্রেমে পড়েছে। প্রেমিকাকে যাকে বলে চোখে হারাচ্ছে! দীঘা বেড়াতে গিয়েও তাদের সারাদিন ফোনে ফুসুর ফুসুর চলছে। সে এক ট্যালেন্ট বটে.... কি বলছে পাশের লোকটি টের পাবে না অথচ ওপারের সঙ্গীটি ঠিক শুনতে পেয়ে যাচ্ছে! যাই হোক... প্রথম দিনটা কাটার পরেই ভোলা হঠাৎ বেঁকে বসল তাকে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দিতে হবে! সে নাকি তার প্রেমিকাকে কথা দিয়েছে পরের দিন বিকেলে ডেটিং যাবে! শুনে তো বাকি সবাই তাকে বাছা বাছা বিশেষণে ভরিয়ে দিলো প্রথমে। কিন্তু আমাদের প্রেমিক মশাই তাতেও অবিচল। তার লক্ষ্য স্থির... কলকাতা পৌঁছাতেই হবে। 

এই পরিস্থিতিতে আমাদের মধ্যে বাবুর মাথায় একটা বদ বুদ্ধি এলো! এই বাবুর একটা ক্যালি আছে। মিথ্যে কথাও এত কনফিডেন্স নিয়ে বলতে পারে যে বোঝাই যায় না মিথ্যে বলছে। কাজেই ভোলাকে বোঝানোর দায়িত্বও সেই নিল। বিকেল বেলায় বাবু বললো "ভাই শোন.... খবর নিয়ে জানলাম কাল সকালে বাস সার্ভিস বন্ধ। ট্রেনের টিকিটও পাওয়া যাচ্ছে না। কাজেই তোর কলকাতা ফেরা একটু চাপের"। ভোলা তো সব শুনে বেশ হতাশ হয়ে পড়ল। বাবু বললো "চাপ নিস না....একটা উপায় আছে কলকাতা যাবার.... তবে একটু কষ্ট হবে যেতে"। ভোলা তো যেন হাতে চাঁদ পেল! বললো "হোকগে কষ্ট.... আমি যেতে রাজি। কিন্তু উপায়টা কি?" বাবু বললো "দীঘা থেকে খিদিরপুর অব্দি নাকি একটা লঞ্চ সার্ভিস চালু হয়েছে বুঝলি.... সেই লঞ্চের ক্যাপ্টেনকে বলে অনেক কষ্টে রাজি করানো গেছে। বলেছে তাকে হাওড়া নামিয়ে দেবে। কাল ভোর ভোর লঞ্চ ছাড়বে। রেডি থাকিস কিন্তু.... ফোন এলেই বেড়িয়ে পড়বি"। খুশির চোটে ভোলা সবাইকে এক কাপ করে চা খাইয়ে দিল। চা খেয়ে বাবু বললো "শুধু একটু কষ্ট করতে হবে বুঝলি... লঞ্চ নাকি হাওড়ায় দাঁড়ায় না। তাই যখন জেটির কাছ দিয়ে লঞ্চ যাবে তোকে লাফ মেরে নেমে পড়তে হবে"। সত্যি বলতে গোটা প্ল্যানটা শুনতে যতই অবাস্তব লাগুক সেই মুহূর্তে কেন জানিনা ভোলা সেটাই মেনে নিয়েছিল! আমাদের বাকি বন্ধুদের কাজ ছিল সায় দিয়ে যাওয়া। প্রচণ্ড হাসি চেপে আমরা সেই কাজই করে গেলাম সারাদিন ধরে।

সেদিন সন্ধ্যে হতেই তার ব্যাগপত্র গোছানো শেষ। সবার আগে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়েও পড়ল। পরদিন ভোরবেলা উঠে বাবুদের ঘরে গিয়ে দরজা ধাক্কা ধাক্কি শুরু করল। লঞ্চের ক্যাপ্টেনের ফোন নম্বর দিতে হবে। বাবু ঘুমের ঘোরেই বলল "ক্যাপ্টেন ফোন করে বলেছে বিশেষ কারণে লঞ্চ ক্যান্সেল... তুই ঘুমো গিয়ে"। নাছোড় ভোলা দুটো গালাগাল দিয়ে বললো "তুই ঘুমো... আমি নিজেই গিয়ে ব্যাপারটা দেখছি"। নীচে নেমে হোটেলের একজনকে জিজ্ঞেস করল খিদিরপুরের লঞ্চ কোথা থেকে ছাড়ে। হোটেলের লোকটি তো আকাশ থেকে পড়ল! দীঘা থেকে খিদিরপুর আবার কবে থেকে লঞ্চ চালু হলো! পুরো ব্যাপারটা শুনে ভোলা বুঝতে পারল তাকে মুরগি করা হয়েছে। তারপর? আন্দাজ করতেই পারছেন কোন কোন বিশেষণে আমাদের ভরিয়ে দিয়েছিল সে! 😂

সেই ঘটনার পর এতগুলো বছর পেরিয়ে গেছে। ভোলার বিয়ে হয়েছে তার সেই প্রেমিকার সঙ্গেই। তবু এখনও পাড়ার আড্ডায় দীঘার প্রসঙ্গ উঠলেই অবধারিত ভাবে আসে সেই দীঘা খিদিরপুর লঞ্চের গল্প। আজও আমাদের কপালে জোটে বাছা বাছা বিশেষণ! 😂😂