|
সকাল বেলায় মর্গ্যান হাউস |
ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির কাছে ইদানিং কালিম্পংয়ের মর্গ্যান হাউস নামটা বেশ জনপ্রিয়। অবশ্য তার একটা অন্য কারণও আছে। ব্রিটিশ কলোনিয়াল আর্কিটেকচারের অনন্য নিদর্শন এই মর্গ্যান হাউসের আবার "ভুতুড়ে" বাড়ি হিসেবে "সুনাম" আছে! আজকাল গুগলে একটু খুঁজলেই পেয়ে যাবেন মর্গ্যান হাউসে রাত কাটানো লোকজনের রোমহর্ষক সব অভিজ্ঞতার গল্প। তাই ভাবলাম একবার এখানে গিয়ে থাকলে মন্দ হয়না! ভূতের দেখা পাই না পাই অন্তত একটা হেরিটেজ প্রপার্টিতে থাকার অভিজ্ঞতা তো হবে।
|
বাংলোর পিছন দিকে |
১৯৩০ এর দশকের প্রথম দিকে পাট ব্যবসায়ী জর্জ মর্গ্যান কালিম্পংয়ের দুরপিন দারা পাহাড়ের ওপর এই বাংলোটি তৈরী করেন। প্রায় ১৬ একর জায়গা জুড়ে স্থাপিত এই বাংলো মূলত বাগানবাড়ি হিসেবেই ব্যবহৃত হত। মর্গ্যান দম্পতির মৃত্যুর পর বাড়িটি ট্রাস্টিদের হাতে চলে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাড়ির দায়িত্ব নেয় ভারত সরকার। পরে ১৯৭৫ সাল নাগাদ WBTDCLকে মর্গ্যান হাউস হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে অট্টালিকাটি "বুটিক হোটেল" হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রায় শতাব্দী প্রাচীন এই বাংলোয় থাকার অভিজ্ঞতাই আজ ভাগ করে নেবো সবার সাথে।
|
গেট থেকে মর্গ্যান হাউস
|
|
রাতের মর্গ্যান হাউস
|
মূল কালিম্পং শহর থেকে প্রায় ৩ কিমি বাইরে আর্মি ক্যান্টনমেন্ট এরিয়ায় অবস্থিত হওয়ায় মর্গ্যান হাউসের পরিবেশ খুব শান্ত। বাংলোর সামনে এবং পিছনে আছে সযত্নে তৈরী বাগান এবং পাইন গাছের সারি। সকালে বাংলোর লনে বসে দার্জিলিং টি খাবার মজাই আলাদা! এখন ফুলের সিজন শুরু হওয়ায় বাগানের প্রায় প্রতিটি গাছই রঙিন! আকাশ পরিষ্কার থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখাও মেলে এখান থেকে। তবে আমাদের মন্দ ভাগ্য! আকাশ পুরো মেঘলা থাকায় "তেনার" দর্শন মেলেনি। এছাড়াও উপভোগ করতে পারবেন রাস্তার উল্টোদিকে "গ্রীন গেল গল্ফ কোর্সের" অসাধারণ দৃশ্য। মর্গ্যান হাউসের ভিতরে ঢুকলে মনে হবে মধ্যযুগীয় কোন বাড়িতে প্রবেশ করেছেন। কাঠের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে ৫টি ঘর এবং নীচে ডাইনিং হলের পাশে একটি ঘর আছে। ঘরের মেঝে কাঠের তৈরী। এমনকি প্রতিটি ঘরে ফায়ার প্লেস করা আছে... যদিও কোনোটাই ব্যবহার হয় না বর্তমানে। এখানে সকালের ব্রেকফাস্ট কমপ্লিমেন্টারি। খাবার দাবার বেশ ভালো এবং দাম আয়ত্তের মধ্যেই। এখানকার কর্মচারীদের ব্যবহার প্রচণ্ড ভাল এবং ট্যুরিস্টদের সাহায্যের জন্য এঁরা সর্বদাই প্রস্তুত।
|
গ্রীন গেল গল্ফ কোর্স
|
|
গ্রীন গেল গল্ফ কোর্স |
ভাবছেন এত কিছু বললাম আর "তেনাদের" কথা কিছু বলছি না কেন? আরে থাকলে তো বলবো! নেটে তো অনেককিছুই পড়েছিলাম। কেউ নাকি রাতে লেডি মর্গ্যান এর হিল তোলা জুতোর আওয়াজ পেয়েছেন! কাউকে নাকি সকালে বাগানের কোন গাছের তলায় পাওয়া গেছে! আবার কেউ কেউ তো এত ভয় পেয়েছেন যে বাইবেল নিয়ে শুতে হয়েছে! বিশ্বাস করুন কিছুই নেই। সব গাঁজাখুরি গপ্পো! এখানকার কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানলাম বেশিরভাগ "ভূত শিকারী", যাঁরা নাকি এখানে রাতের বেলায় ভূতের দেখা পেয়েছেন, তাঁরা আদৌ এখানে থাকেননি! হয়ত এইসব রটনা আটকাতেই বোর্ডার ছাড়া বাইরের ট্যুরিস্ট প্রবেশ নিষেধ।
দুজন মানুষের কথা না বলে এই লেখা শেষ করলে খুব অন্যায় হবে। প্রথমজন রাজ বসু স্যার। সমগ্র উত্তর পূর্ব ভারতে পর্যটনের প্রচার এবং উন্নতির বিষয়ে এনার ভূমিকা অসামান্য! গত ২২শে মার্চ আমার কন্যার জন্মদিন ছিল। ঘটনাচক্রে সেদিন রাজ্য সরকারের তরফে মর্গ্যান হাউসে একটি ট্রেনিং প্রোগ্রাম রাখা হয়েছিল। ট্রেনিং নেবেন স্বয়ং রাজ বসু স্যার। সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে আমার এবং আমার স্ত্রীর কথোপকথনের সময় মেয়ের জন্মদিনের ব্যাপারটা ওনার কানে যায়। আমাদের সম্পূর্ন অবাক করে দিয়ে রাজ বসু স্যারের উদ্যোগে এবং মর্গ্যান হাউসের বাকি কর্মচারীদের সহায়তায় বার্থডে কেকের আয়োজন করা হয় এবং ছোট্ট একটি সেলিব্রেশন করা হয়! বেড়াতে গিয়ে এইরকম আতিথেয়তা সত্যি মন ছুঁয়ে গেল। দ্বিতীয়জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার শুভঙ্কর বাবু। এই ভদ্রলোকের ব্যবহার অসাধারণ। সবসময় হাসি মুখে সাহায্য করতে পাশে পাবেন শুভঙ্কর বাবুকে। আসলে এনাদের মত মানুষদের জন্যই সম্পূর্ন অচেনা জায়গায় থাকার অভিজ্ঞতাও অসাধারণ হয়ে ওঠে! আবারও ফিরে যাবার ইচ্ছে জাগে মনে।
|
কন্যার জন্মদিন উদযাপন। একদম ডান দিকে রাজ বসু স্যার। একদম বাঁদিকে শুভঙ্কর বাবু।
|
মর্গ্যান হাউসের ঘরের বুকিং এবং ট্যারিফ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন
WBTDCL এর ওয়েবসাইটে। রুম বুকিং একমাত্র অনলাইনেই করা যায়। আসল মর্গ্যান হাউসে থাকার জন্য ওয়েবসাইটে "মর্গ্যান হাউস ট্যুরিজম প্রপার্টি" সিলেক্ট করে বুকিং করতে হবে। ভাগ্য ভালো থাকলে মর্গ্যান সাহেবের বাংলোয় আপনারও থাকার সৌভাগ্য হয়ে যাবে।