"বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে, বহু ব্যয় করি, বহু দেশ ঘুরে....." বিশ্বকবির এই কবিতাটি জানেননা বোধকরি এমন কেউ নেই। ভ্রমণপিয়াসী মানুষের কাছে গন্তব্য, পথ, এবং পথের বাঁকের প্রতিটি দৃশ্য, নিসর্গ, বা মানুষের সাক্ষাৎ, সবই সুন্দর। নির্জনতা পছন্দ করেন যারা, তারাও এমন স্থানই সন্ধান করেন যেখানে বিজন বসে আপন মনের সাথে কথা বলা যায়। এসবের মধ্যে কোনো বাধাবিঘ্ন, ছোটখাটো অসুবিধা তাদের মোটেও থামিয়ে রাখতে পারেনা, পরেরবার নতুন কোনো জায়গায় যাওয়া। আবার এমন মানুষও আছেন, যারা কোনো না কোনো কারণে একাধিকবার একটি জায়গায় যেতে চান, আন্তরিক টানে, যা অন্যদের পক্ষে হয়তোবা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।
আমি মশাই সেরকম নই, বেড়াতে যাইনি তা নয়, কিন্তু যেতেই হবে এমন কথা নেই, বরং না যেতে হলেও খুব একটা দুঃখিত হইনা। আমি এমন একজন অদ্ভুৎ প্রকৃতির মানুষ, যে একাধিকবার দিল্লী গিয়েও আগ্রায় তাজমহল দেখিনি বহুদিন, যখন দেখেছি সে ঠাঠা রোদ্দুরে পায়ের চেটো প্রায় সেঁকে যাওয়া দুপুরে। আবার, গোয়ায় ঘুরতে গিয়ে সমুদ্রে না যাওয়া মানুষও খুব সম্ভবত আমিই, যাকে বলে বিরল। কিন্তু, একটি ব্যাপারে আমি একপায়ে রাজী থাকি, তা হলো কলকাতার বইমেলা। ছোটবেলায় বাবামায়ের হাত ধরে, বয়স বাড়তে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে, আবার কখনো বা একাই চট করে এক পাক ঘুরে আসা, এটি আমি সাধারণ, বা অসাধারণ কোনো কারণেই ফস্কে যেতে দিইনা৷
আমাদের ছোটবেলায় তো বইমেলা হতো ময়দানে, সবাই-ই মোটামুটি জানেন। যাতায়াতের সুবিধা থাকলেও সেখানে বেজায় ধুলো, আর একপ্রান্তে একেকটি স্টল, সে এক দিকদারি যাকে বলে, কিন্তু কি আর করা, সেভাবেই ঘুরতে হতো, দুইহাতে বইয়ের প্যাকেট, সাথে আসা বাবামায়ের হাতেও ধরা বইয়ের প্যাকেট, আর সবশেষে বেনফিশের গাড়িটা থেকে মনমাতানো খাবার( আমার আবার ফিশফ্রাই, কবিরাজির ওপর একটু পক্ষপাতিত্ব চিরকালই 😋)। ভাবতাম যে বইগুলো কিনবো, মেলায় ঢুকে আর হিসেব থাকতোনা, যা-ই দেখি, মনে হতো এটা নেবো, সেটা চাই!! মা-বাবা কখনো বইপত্র কেনায়, পড়ায় বাধা দেননি, বরং প্রচণ্ড উৎসাহ যুগিয়েছেন, এখনো তাই-ই, এ অত্যন্ত ভাগ্যের ব্যাপার।
তারপর কালে কালে বইমেলার স্থান পরিবর্তন হতে হতে পার্ক সার্কাস, মিলনমেলা প্রাঙ্গণ হয়ে আজ বর্তমানে সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্ক। তা হোক, বছরের এই একটা সময় আমার কলকাতার সবকিছুই খুব ভালো লাগতে থাকে। বিভিন্ন দেশের থীম, আমাদের চেনা প্রকাশনার পাশাপাশি অনেক নামনাজানা সংস্থার সাজানো ডালি, পরিবেশনা... কতকিছুই যে জানা হলোনা, তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ আহরণের চেষ্টা। শুধুই তা নয়, লিটল ম্যাগাজিনের বিস্তার, অনামা শিল্পীর হাতের স্কেচ আঁকানো উৎসুক যুবক-যুবতী, নানান প্রান্ত থেকে আসা মানুষের ভিড়, কৌতূহলী দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েরা, এক লহমার মধ্যে নিজের শৈশবকালেই ফিরে যাওয়া.... সবই তো এই পরিবৃত্তে।
অতিমারীর জন্য দুটো বছর বইমেলা আয়োজিত হয়নি, এ যে কি যন্ত্রণার, বলে বোঝানো কঠিন। তা-ই, যখন ঘোষণা শুনলাম, ২০২২ বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে ২৮শে ফেব্রুয়ারী থেকে ১৩ই মার্চ, মন ভরে উঠলো আনন্দে। আমার জন্য একটা ভালো বিষয় এইটি, যে বন্ধুবান্ধব, ঘনিষ্ঠের অনেকেই বইপ্রেমী, আমার চেয়ে বেশিই বই কম নন। তাই যেই না ব্যাপারটা শোনা, একটা প্ল্যান করে ফেলা গেলো যে, কবে যাওয়া হবে।
এইবারই প্রথম আমি বইমেলার উদ্বোধনের দিন গেলাম। এর আগে যতবারই গিয়েছি, ন্যুনতম দিন তিন-চার পরের থেকে। কিন্তু, ব্যতিক্রম এইবারই, কারণ এক বন্ধু পরদিনই শহর ছাড়ছে, কর্মব্যস্ত জীবনের যা স্বাভাবিক ব্যাপার। গিয়ে দেখলাম, কিছু কিছু স্টল তখনও গুছিয়ে উঠতে পারেনি, তোড়জোড় চলছে, কেউ বা বইয়ের সম্ভার গোছাতে ব্যস্ত, আবার কেউ ব্যানার ইত্যাদি লাগানোর কাজ করছেন। এরমধ্যেই মেলাপ্রাঙ্গণ পরিক্রমা করে মোটামুটি ধারণা করে ফেললাম যে, দিন কয়েক পরে যখন আসবো, কি কি বই অবশ্যই সংগ্রহ করবো, এবং গুরুত্বপূর্ণ স্টলগুলোর নং, অবস্থান ইত্যাদি। কিছু কিছু ক্যাটালগ সংগ্রহ করে ফেরার পালা, তবে "ঝিমিয়ে এলো বইয়ের ঘোর, কেনার পালা সাঙ্গ মোর" নয়, বরঞ্চ বলতে পারেন, এটা সবে শুরু বইমেলার কড়চার।
খাসা লিখেছেন ডাগদার সাব, বাকি পার্ট যেনো জলদি পাই।
ReplyDeleteসেদিন আমি যেতে পারি নি 😒
ReplyDeleteচালিয়ে খেলো
ReplyDeleteDhasu.... Jio.... দুর্দান্ত... Mon vore gelo
ReplyDelete