#যারা_বৃষ্টিতে_ভিজেছিলাম, তারা ফুড ট্যুরটাও করেছিলাম।
আষাঢ় শ্রাবণ পেরিয়ে ঋতুচক্র ভাদ্রে পা দিয়েছে, শহরটাকে সঙ্গে নিয়ে দিব্যি খেলছে কখনো বৃষ্টি, কখনো রোদের মধ্যে। ঘর্মাক্ত হচ্ছি, আর দিনে দশবার করে বিরক্ত হচ্ছি, কখনো ভিজে, কখনো বা চাঁদি তাতিয়ে। সে যাকগে, অমন তো কতোই হয়!! তাই বলে কাজকর্ম করবো না? এ কি মানা যায় অ্যাঁ? না না, কাজ বলতে এদিকসেদিক পেটপুজো, বুঝলেন না?
চীনে, পার্শী, আরবি, মুঘলাই ইত্যাদি ইত্যাদি হওয়ার পরে বন্ধু দেবাঞ্জন অনেকদিন ধরেই বলছিলো একবার আমাদের কলকাতার নিজস্ব ব্যাপার পাইস হোটেলে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করবে! আমি মোটামুটি লেক মার্কেটের তরুণ নিকেতন বা নিউ মার্কেটে সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম, বা কলেজ স্ট্রিটের স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেলের তল্লাটে ঢুঁ মারলেও ও কখনো এই পরিবেশে খায়নি। তাই আমরা ক'জন ঠিক করেছিলাম একবার চিরপরিচিত বইপাড়ায় ঘুরে আসবো, আর একবার নাহয় ডানহাতের ব্যাপারটাও সেরে নেওয়া যাবে। অতঃপর, কথাবার্তা, আলোচনা, সময়, এবং দেখাসাক্ষাৎ করার স্থান নির্বাচন করে বেরিয়ে পড়লাম খাদ্য সফরের এই পর্যায়ে, যা কিনা অচিরেই বদলে যাবে বাঙালি থেকে মিশ্রিত চেহারায়। আহা, আনপ্রেডিক্টেবল না হলে জীবন কেমন বিশ্রী চায়ের মতো ঠেকে না?
আমি আর দেবাঞ্জন আসার পথে ঠিক করলাম প্রথমেই কি আর পাইস হোটেলে যাওয়াটা ভালো দেখাবে? মানে দ্বিপ্রাহরিক ভোজনের সময় না গিয়ে অবেলায়.. একবার অতি প্রিয় "গুঞ্জন" যেখানে হাতছানি দেয়, সেখানে যাবোনা? না না, এতটাও কঠিনহৃদয় নইকো। বাকিদের সেরকমই বলে দেবো স্থির করে গেলাম আমরা কলেজ স্কোয়ারের পথ ধরে ভিজতে ভিজতে। হ্যাঁ হ্যাঁ, অমন বৃষ্টি ঢের ঢের দেখেছি, ভয় দেখিয়ে লাভ নেই!! ছোট্ট, কিন্তু মনোরম, এই হলো সংক্ষেপে গুঞ্জন, আমরা এক এক করে জড়ো হলাম। খাদ্যরসিক হওয়ার একটা প্রাথমিক নিয়ম আছে, তা হলো মনের জানালা দরজা খুলে রাখা! হুম, তা-ই এলো নিজের ছন্দে মন ভালো করা রোস্টেড চিলি পর্ক, চিলি চিকেন, এবং চিলি প্রণ। সবই ড্রাই, কারণ মুখোরোচক পদ যা কিনা খাদ্যের সূচনা করবে, বেশি রসসিক্ত না হওয়াই ভালো, মনের এবং উদরের রসেই জারিত করা যাবে খন। প্রতিটি পদ সুন্দর, সহজ, এবং সুস্বাদু। পর্কের লীন মীট আর ফ্যাট সুষমভাবে বন্টিত, স্রেফ লঙ্কা ক্যাপসিকাম, এবং পেঁয়াজের সান্নিধ্যে পরিচিত মাংস, চিংড়ি সবারই পছন্দ হলো। বেশ ঠান্ডা হাওয়ায় ততক্ষণে চারদিক ভালোই লাগছে।
আজ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে কলেজ স্ট্রিটের ৭২.৩৪% দোকান বন্ধ। তারই মধ্যে বইচই, বইবন্ধুর মতো কিছু জায়গায় ভালো কিছু সন্ধান পেলাম। নাহ্, নিইনি, পরেরবারের জন্য রেখে এইচি। ধূমপান, চা পান ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে এক চক্কর গেলাম কলেজ স্কোয়ারের গন্ডিতে। ঘড়ির কাঁটা তখন তলব করেছে মাথাকে, ওহে!! এবার চলো। সদলবলে উপস্থিত হলাম ইতিহাসের অংশ হয়ে যাওয়া এই পাইস হোটেল সাক্ষী একমেবাদ্বিতীয়ম সুভাষ বসুর আগমনের, যার হাতে গড়া সেই মনগোবিন্দ পন্ডার সৃষ্টি আজ কালক্রমে মহীরুহে পরিণত। যা-ই হোক, দুপুরবেলা, ছুটির দিন হলেই ভিড় যথেষ্ট। খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে সবারই স্থান সঙ্কুলান হলো বটে। আমরা একে একে নিজেদের পছন্দের পদ বললাম। কেউ খাসির মাংস, কেউ বা ইলিশ, আবার জাভেদ খেলো পারশে। সাথে ঘন মুগের ডাল, পুঁইশাকের চচ্চড়ি, আর আমের চাটনি, পাঁপড়। সহজ, এবং সুস্বাদু। বিশেষত চচ্চড়িতে ঠোঁট থেকে জিভ ছুঁতেই টপ করে এক বিন্দু অশ্রুজল নিঃসৃত হলো, সুখানুভব আরকি...! তরিবত করে ডানহাতের ব্যাপার সমাপন করে এলাম মোড়ে, মিঠেপান না হলে মধুরেণসমাপয়েৎ কেন বলেছে মশাই??
তারপর? বাড়ি ফিরে যাওয়া? আরে রোসুন, এতো তাড়া কিসের? একপাক নাহয় ঘুরেই যাই ধরমতল্লার মুলুকে। দুটো ট্যাক্সি, সাঁইসাঁই করে সোজা জিপিও ক্যাফে!! আমাদের জেনারেল পোস্ট আপিসের এই ব্যাপারটা শুনেছিলাম বন্ধু সপ্তর্ষির কাছে। মতলবটা ছিলো একদিন আসা যাবে, তা আজই কেন নয়? গেলুম, কিন্তু সত্যি বলতে কি, খাদ্যপানীয়াদি বড়োই অপ্রতুল... পরিবেশ চমৎকার বটে, ডাকটিকিট ও অ্যান্টিক সামগ্রীর আর্টিফ্যাক্ট দেওয়াল সুসজ্জিত করেছে, আর Ionic–Corinthian স্থাপত্যের নিদর্শন তো আছেই। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত করে চা পান সেরে বিদায় নেওয়ার পালা।
ফেরার পথে আমরা আবার বাড়ির কাছে রাধুবাবুর ওখানে গিয়েছিলাম, ফিনিশিং টাচের জন্য। না না, ঐ দুটো ফ্রাই, দুটো কাটলেট, একটু চা, এই আরকি। সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে একটু শরীরে তাগত আনবো না, কি বলেন?
আজকের সফরে বেজায় মিস করেছি কিছু সঙ্গীকে৷ তবে, পরেরবার, সে এক দারুণ আনন্দের ব্যাপার হবে এ-ই আশাতেই রইলাম। আজ আসি, কেমন?
যৎপরোনাস্তি সুস্বাদু। ভিটামিন রসের সুষ্ঠু, সুষম বন্টন এবং রন্ধনশৈলীর নৈপুণ্যে গোটাটাই অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এবং পরিচ্ছন্ন হইয়াছে। আর পরিবেশন লইয়া বলিতে পারি তাহা বিদ্যাসাগরীয় বঙ্গ-ললিত এবং লালিত।
ReplyDeleteদারুন হয়েছে😂
ReplyDeleteশেষে রাধুবাবুর চা না খেলে সত্যিই ট্যুরটা স্বার্থক হতো না।
ReplyDeleteFantastic ❤
ReplyDeleteদারুন লেখা
ReplyDeleteWant an English transalation
ReplyDeletebondhubor chomotkar likhha felsenn dyaktasi, eaibar oi prosonge aktu bhabna chinta koren na kyan 😊
ReplyDeleteজিভের জল টস করে পড়েই যাচ্ছিলো, কিন্তু তখনই মনে হলো আপাতত সামলাই নিজেকে।। দারুণ উপস্থাপনা।। তবে পাইস হোটেলের নাম আর যাওয়ার উপায় টা জানালে সুবিধা হবে।।
ReplyDeleteEk kathay darun 👌
ReplyDeleteDarun
ReplyDelete