এই বছরের শীতের সময়, জানুয়ারী মাসে, আমরা কয়েকজন খাদ্যপ্রেমী, বেরিয়ে পড়েছিলাম কলকাতার নানাবিধ খাদ্যের রসে রসনা তৃপ্তির উদ্দেশ্যে। সেকথা লিখেছি, তা সেই বারই ভেবেছিলাম, এই পথ শেষ করে দেওয়া যাবেনা, অন্তত আরো বার কয়েক এদিক-ওদিক যাওয়াটা উচিত, নইলে কালের নিয়মে আমরা আফশোস করবো। তা, সারা পৃথিবীতে তো জানিই কি চলছে, তাই বেশ কয়েক মাস এই পবিত্র কর্তব্য ছিলো স্থগিত। কিন্তু, সে আর কতদিন আটকে রাখতে পারে? তাই, আজ, শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে আমরা কয়েকজন আবারও বেরোলাম চীনেপাড়ায়, এবং আরো কিছু চৈনিক রেস্তোরাঁয় অল্পবিস্তর খাদ্য চেখে দেখতে। গতবার যারা ছিলো, তাদের কয়েকজন আসতে না পারার দুঃখ তো ছিলো বটে, তবে নতুন কিছু খাদ্যরসিক এবারে আমাদের সঙ্গী হলো।
এবারে আমরা স্থির করেছিলাম শুরু করবো দুপুরের খাবারের সময়, কারণ রেস্তোরাঁগুলো তেমন সময়েই খোলে। প্রথমেই গেলাম "টুং নাম" রেস্তোরাঁয়, যেখানে খাস চীনে খাবারের সুঘ্রাণে ম-ম চারদিক, আমরা নিলাম ফ্রায়েড চিকেন ওয়ান্টন, ফ্রায়েড পর্ক ওয়ান্টন, চিকেন মেইফ্যুন স্যুপ, এবং ড্রাই গার্লিক পর্ক। প্রতিটি পদই যাকে বলে দারুণ আনন্দের ব্যাপার, স্বাদকোরক আশ্বস্ত হলো
, যে হ্যাঁ, প্রথম ধাপেই সুন্দর একটা ড্রিবলিং দেখতে পেলাম। খুব সুন্দর একটা আবহ নিয়ে এবার গমন "পাও হেং" এর দিকে, যা একেবারেই পায়ে হাঁটা রাস্তা। নিজেদের মধ্যে খাবারের প্রশংসা করতে করতে সেখানে গেলাম, বাছাই করে বললাম এখানে খাওয়া যাক মাছ, মৎস্যপ্রিয় বাঙালি বলে কথা; তা এলো যথাক্রমে প্যান ফ্রায়েড ফিশ, ফিশ ওপালো, এবং প্রণ ইন হট গার্লিক; নরম ভেটকির ফিলে, চীনে মশলা, এবং পাকপ্রণালীর গুণে তখন হয়ে গেছে অমৃত, বেশ ভালো লাগলো। চেখে টেখে বেরোলাম যখন, তখন সবাই-ই খুশী, কারণ এসেছি যার জন্য, সে নিরাশ করেনি তখনো পর্যন্ত। গন্তব্য এবার "ইউ চিউ", সামান্য দূরে, বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিটে, ছিমছাম সুন্দর পরিবেশে বসে অর্ডার দেওয়া গেলো প্রথমে গলা ভেজানোর জন্য লাইম সোডা, এবং জেসমিন টি, অভিজ্ঞতা অর্জন করতে ক্ষতি কি? সেসব গলাধঃকরণ করার পরে বলা গেলো, নিয়ে আসুন ম্যান্ডারিন ফিশ, রোস্টেড চিলি পর্ক, এবং মিক্সড হাক্কা নুডলস। এবারেও খেলা জমে উঠলো, প্রতিটি কুশীলব মনোরঞ্জন করলো অতীব সুন্দর ভাবে। চীনেপাড়ায় আমাদের পর্বের প্রথম ভাগ যাকে বলে "ডি লা গ্র্যান্ডি মেফিস্টোফিলিস ইয়াক ইয়াক"!!! (টেনিদার মতো খাদ্যরসিক হয় ক'জন?)
এবার পাড়ি দক্ষিণের দিকে, দুয়েকটা জায়গায় যাওয়া বাকি। ট্যাক্সি ছুটলো হাজরা রোডের নু ওয়ান লি, অবশ্য সেখানে দেখা গেলো দরজা বন্ধ, মানে তখনও বৈকালিক বাণিজ্যের সময় হয়নি আরকি, যাই হোক, আমাদের আগমনের ফলে তা আরম্ভ হলো, আবারও এক প্রস্থ লাইম সোডা দিয়ে গলা ভিজিয়ে অর্ডার দেওয়া গেলো চিমনী স্যুপ, আর ক্রিসপি চিকেন। এই চিমনী স্যুপের অভিনবত্ব বেশ মনোগ্রাহী, জ্বলন্ত চিমনীর উপরে ধাতব আধারে খাদ্যসামগ্রী, এবং ক্কাথ, অর্থাৎ স্যুপ তৈরি হচ্ছে, খেতে অসাধারণ, এবং নতুনত্ব তো বলাই বাহুল্য। সেসবের পালা শেষ করে আমরা যখন বেরোলাম তখন প্রাণ চায়, উদর না পারে.. নইলে আজ এলগিন রোডের টিবেটান ডেলাইট, আর কেয়াতলার টাক হেংও তালিকায় ছিলো( পরদিন হবে বলে রেখেছি)।
এসব শেষ করে মধুরেণসমাপয়েৎ করলাম জনক রোডের " ব্লু টোকাই"তে, সেখানে শুধুই পানীয়, যাকে বলে এনার্জি নেওয়া, এবং তারপর যে যার গৃহগামী।
দুর্দান্ত একটি দিনের জন্য সবাইকে অনেক অনেক ভালোবাসা ❤️
দলের নব সদস্য অন্বেষা চক্রবর্তী, এবং আমাদের প্রিয় অরিজিৎ ঘোষ দা অসাধারণ স্পিরিটের অধিকারী, যেমন ঘোরাঘুরি করতে সক্ষম, তেমনই খাদ্যরসিক। আমার বাল্যবন্ধু দেবাঞ্জন চ্যাটার্জি, পরম সুহৃদ শান্তনভ রায় বাবু এবং ভ্রাতৃপ্রতিম স্নেহাশীষ গাঙ্গুলি, তোমাদের সাথে বেরিয়ে এমন সুন্দর দুবার দিনযাপনের কথা মনে রাখবো, এবং অপেক্ষায় থাকবো, মোগলাই খানা দিয়ে উদযাপন করার জন্য।
এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে দারুণ হতো, আমি বলি যে 😍
Wah doc wah ki likhi jome kheer... Jio
ReplyDeleteDurdanto
ReplyDeleteDarun 👏👏
ReplyDeleteদারুণ লেখা! কলকাতায় এইরকম কত যে মনিমানিক্য আছে! এইরকম আরও অভিজ্ঞতার আশায় রইলাম আগামীদিনে।
ReplyDeletekhasa, tyangra chinapotti teo ek chokkor jawar proyojon porer bar.
ReplyDelete